দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে সুপারিশ করেছে যে, ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালট পেপারে স্থানীয় নির্বাচন করানো হোক। বিশ্লেষকদের মতে, সারা দেশে ইভিএমের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যেই কংগ্রেস এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
ইভিএমে আস্থা হারিয়েছেন মানুষ, তাই ব্যালটেই ভোটগ্রহণ হোক। একটা সময় প্রবল রব তুলেছিল বিরোধী শিবির। ২০১৮ সাল নাগাদ ব্যালট বাতিল করে লোকসভা ভোট ইভিএমে করার দাবিতে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে আবেদনপত্রও জমা দিয়েছিল কংগ্রেস। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফেও ইভিএমের বদলে ব্যালট ফেরানোর দাবি জানানো হয়। ইদানিং ইভিএম আন্দোলন খানিক স্তিমিত। বদলে ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগ রাস্তায় নেমেছেন রাহুল গান্ধী। কিন্তু ইভিএমও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় সেটা বুঝিয়ে দিতে নিজেদের দখলে থাকা রাজ্যে ব্যালট ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাত শিবির।
কর্নাটকের রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। ভোট করাতে হবে ব্যালট পেপারে। রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী এইচ কে পাতিল বলছেন, “ইভিএমের আর কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। বিশেষ করে মহারাষ্ট্র নির্বাচনে যেভাবে শেষবেলায় হাজার হাজার ভোট পড়ল, তারপর থেকে ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন আরও জোরাল হয়েছে।” তাঁর চ্যালেঞ্জ, বিজেপি পারলে দেখাক যে ইভিএম ছাড়াও তারা জিততে পারে। কর্নাটকের ওই স্থানীয় নির্বাচনে রাজ্যের ৬০ শতাংশ মানুষ ভোট দেন। ১৯৮২ সালে শেষবার সে রাজ্যে ব্যালট পেপারে ভোট হয়েছিল কর্নাটকে।
২০১৭ সালের উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের পর থেকেই ইভিএম দুর্নীতি নিয়ে সরব হয় বিরোধীরা। প্রথম সুর চড়িয়েছিলেন বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী। মায়াবতীর সুরেই পরে সুর মেলান সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব। এরপর দিল্লির পুর নির্বাচনে পরাজয়ের পর ইভিএম নিয়ে সরব হয়েছিল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। দিল্লি বিধানসভায় নজিরবিহীনভাবে কীভাবে ইভিএম হ্যাক হয় তা দেখানোরও চেষ্টা করেছিলেন আম আদমি পার্টির বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজ। কার্যত বাধ্য হয়ে ইভিএম নিয়ে সর্বদল বৈঠকের ডাক দেয় নির্বাচন কমিশন। কমিশনের দাবি ছিল, কোনওভাবেই ইভিএম হ্যাক করা সম্ভব নয়। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে ওপেন চ্যালেঞ্চ ছুঁড়ে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলিকে ইভিএম হ্যাক করার জন্য আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু বড় রাজনৈতিক দলগুলির কোনওটিই সেই চ্যালেঞ্জে অংশ নেয়নি। বিজেপি অবশ্য শুরু থেকেই ইভিএম দুর্নীতির অভিযোগকে পাত্তা দেয়নি। শাসক শিবিরের দাবি ছিল নিজেদের পরাজয়ের ব্যর্থতা ঢাকতে ইভিএমকে ঢাল করছে বিরোধীরা। এত কিছুর পরেও কিন্তু বিরোধীরা ইভিএম-বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যায়। বিরোধীদের দাবি, একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ, এবং কিছুক্ষেত্রে ইভিএমের গোলযোগের প্রমাণ মেলায় সাধারণ ভোটাররা এর উপর থেকে ভরসা হারাচ্ছে। এই মুহূর্তে ভোটার তালিকায় গরমিলের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসায় এমনিই বেশ চাপে নির্বাচন কমিশন। তার উপর ইভিএম ফিরিয়ে চাপ আরও বাড়ানোর চেষ্টায় হাত শিবির।