দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক : অনেকেই মনে করেন, লিভারের অসুখ একবার ধরা পড়লে আর সারে না—কিন্তু এই ধারণা ঠিক নয়। সময়মতো রোগ ধরা পড়লে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু হলে লিভারের সমস্যা অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবে দীর্ঘদিন ধরে লিভারের রোগ চলতে থাকলে, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের অভ্যাস থাকলে বা অতীতে জন্ডিস হয়ে থাকলে লিভারের উপর চাপ বাড়ে এবং অঙ্গটি ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে।শুরুটা হয় ফ্যাটি লিভার দিয়ে, ধীরে ধীরে তা জটিল লিভারের রোগে পরিণত হয়, যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলে ‘লিভার সিরোসিস’।সচেতনতার অভাব ও রোজকার যাপনে অসংযমের কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লিভারের রোগ অনেক দেরিতে ধরা পড়ে। লিভার ভাল রাখতে হলে খাওয়াদাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে আগে জরুরি। রোজ এমন কিছু খাবার ও পানীয় খাওয়া হয়, যা ধীরে ধীরে লিভারের ভিতরটা নষ্ট করে ফেলে
। তাই কোনটি লিভারের জন্য ভাল ও কোনটি খারাপ, তা জেনে নেওয়া খুব জরুরি।
লিভার চর্বি উৎপন্ন করে, যা রক্তের মাধ্যমে শরীরের পেশিতে ছড়িয়ে পড়ে।লিভার যতটা মেদ তৈরি করছে, আর যতটা খরচ করছে, তার মধ্যে যদি ভারসাম্য না থাকে, অর্থাৎ, মেদ বেশি হয়ে যায়, তা হলে সেটা পরতে পরতে লিভারে জমতে থাকে।এ সময় চিকিৎসকেরা বলেন, রোগীর ‘ফ্যাটি লিভার’ হয়েছে। লিভার থেকে মেদ কমাতে ওষুধের পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু পানীয়ও জরুরি।
*বিটরুট ও বেরির স্মুদি
বিটরুটে থাকা বিট্যালেন্স এবং বেরিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট লিভারের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এই স্মুদি বানাতে প্রয়োজন— অর্ধেক বীট (সেদ্ধ বা কাঁচা টুকরো করে কাটা), নানা রকম বেরি (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, র্যাস্পবেরি), অর্ধেক গাজর, আধ কাপের মতো জল বা কাঠবাদামের দুধ, এক চামচ লেবুর রস, এক কাপ পুদিনা পাতা। সমস্ত উপকরণ পুদিনা ছাড়া মিক্সিতে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এর পর উপরে পুদিনা পাতা ছড়িয়ে খেতে হবে।
*হলুদ ও আনারসের স্মুদি
হলুদের কারকিউমিন ও আনারসে প্রদাহনাশক উপাদান ব্রোমালিন লিভারের সমস্যা কমাতে সহায়ক। শরীরের প্রদাহ নাশ করে, অম্বলের সমস্যা দূর করতে পারে। হলুদ ও আনারসের স্মুদি বানাতে প্রয়োজন— এক কাপের মতো আনারসের টুকরো, আধ চামচ হলুদ গুঁড়ো, ১ ইঞ্চি কাঁচা হলুদ, আধ ইঞ্চি আদা, আধ কাপ নারকেলের জল, ১ চামচ লেবুর রস, এক চিমটি গোলমরিচের গুঁড়ো। সমস্ত উপকরণ ব্লেন্ডারে মিশিয়ে নিতে হবে। রোজ সকালে বা বিকালে পান করলে লিভার ভাল থাকবে।
*আপেল ও আদার রস
এই পানীয় নিয়মিত পান করলে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দূর হবে। দীর্ঘ সময় ধরে যাঁরা লিভারের রোগে ভুগছেন, তাঁদের জন্য খুবই উপকারী এই পানীয়। আপেল ও আদার স্মুদি বানাতে প্রয়োজন— ১টি গোটা আপেল, ১ ইঞ্চি আদা, অর্ধের শসার টুকরো, আধ কাপ জল, ১ চামচ লেবুর রস। সমস্ত মিশিয়ে নিয়ে রোজ সকালে খালি পেটে খেলে লিভারের যে কোনও রোগ দূর হবে।
কোন কোন পানীয় ক্ষতিকর?
.চিনিযুক্ত যে কোনও পানীয় যেমন সোডা, নরম পানীয়, এনার্জি ড্রিঙ্ক লিভারের ক্ষতি করে।
.প্যাকেটজাত ফলের রস, চা বা কফি বেশি খেলে ফ্যাটি লিভার হতে বাধ্য।
.মদ্যপান বেশি করলে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে।
.দোকানে আজকাল নানা রক ডায়েট ড্রিঙ্কস পাওয়া যায়। অনেকেই মনে করেন, চিনি না থাকায় এগুলি নিরাপদ। আসলে এই ধরনের পানীয়ে থাকে কৃত্রিম শর্করা অ্যাসপার্টাম যা লিভারের জন্য মোটেও ভাল নয়। নিয়মিত ডায়েট সোডা বা ডায়েট .ড্রিঙ্কস খেতে থাকলেও ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হতে পারে।
.মিষ্টি দই বা ক্রিম দেওয়া পানীয় কিন্তু লিভারের জন্য ভাল নয়। এগুলি বেশি খেলে রক্তে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ক্যালোরি বেড়ে .যাবে, তাতে লিভারে অতিরিক্ত মেদ জমা হবে।