দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক : যতই মানুষ হাঁটু, কোমর বা শরীরের নানা জায়গার ব্যথায় ভোগেন, ততই ভিটামিন ডি নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। এখন আর একে শুধু হাড়ের মজবুতির জন্য প্রয়োজনীয় ভাবা হচ্ছে না। অনেকেই বুঝতে পারছেন, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থেকে শুধু হাড় নয়, শরীর ও মনের উপরেও প্রভাব পড়ে। বারবার ক্লান্ত লাগা, অনিচ্ছা, এমনকি অবসাদ—সব কিছুর নেপথ্যে থাকতে পারে এই একটি ভিটামিনের অভাব। পাশাপাশি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যেতে পারে শরীরে এই ভিটামিনের ঘাটতি হলে।
শরীরের ভিটামিন ডি-এর চাহিদার বড় একটা অংশ, প্রায় ৮০ শতাংশই, পূরণ হয় সূর্যের আলো থেকেই।সূর্যালোকের সংস্পর্শে ভিটামিন ডি মানুষের ত্বকেই তৈরি হয়। সে কারণেই চিকিৎসকেরা বলেন, শরীরে রোদ লাগানো ভাল। এতে শুধু শরীর ভিটামিন ডি পায় না, ক্যালশিয়াম শোষণের পথ সুগম হয়। হাড় মজবুত হয়। চিকিৎসকেরা বলেন, এ দেশে রোদের অভাব না থাকলেও এই যে এত ব্যথা, হাড়ে ভঙ্গুর হওয়ার সমস্যা দেখা যাচ্ছে কম বয়েসিদের মধ্যে, তার অন্যতম কারণ রোদ না লাগানো। কেউ ঘুম থেকে দেরিতে ওঠেন। ঘরে বসেই অফিস করেন। কেউ আবার অফিস গেলেও এসি ঘরে দিন কাটে। কারও আবার কাজ হয় রাতভর। দিনে ঘুমোন। এর ফলেই রোদ লাগে না শরীরে। দিনের পর দিন এমনটা চললে ভিটামিন-ডির ঘাটতি হতেই পারে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৬ শতাংশই ভিটামিন ডি-এর অভাবে ভোগেন। পুরুষদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ এবং মহিলাদের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশের শরীরে স্বাভাবিক ভাবে যে পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকার কথা, তা থাকছে না।
ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি কখন হয়?
এক জন পূর্ণবয়স্ক মানুষের রক্তে ভিটামিন ডি-এর পরিমাণ ২০ ন্যানোগ্রাম প্রতি মিলিলিটারের নিচে নামা উচিত নয়। ভিটামিনের মাত্রা তার চেয়ে কমে গেলেই শরীরে ঘাটতি তৈরি হয়। তার ফলে দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা।
কীভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা করা যায়?
সমস্যা হতে পারে খাবার খাওয়ার নিয়মকানুনে ভুলভ্রান্তি হলেও। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দূর করতে হলে কী ভাবে শরীর আরও ভাল ভাবে সেটি শোষণ করে, তা জানতে হবে। পুষ্টিবিদদের পরামর্শ, খাদ্যতালিকায় গাজর এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রাখার। গাজর এবং ফ্যাট ভিটামিন ডি শোষণে সাহায্য করে। সাধারণত স্যামন, ম্যাকারেল মাছে ভিটামিন ডি মেলে। কিন্তু দু’টি মাছই এ দেশে সে ভাবে খাওয়ার চল নেই। ভিটামিন ডি-এর অভাব দূর করতে সামুদ্রিক মাছ, দুধ, ডিম, কমলালেবুর রস, টক দই, ইয়োগার্ট রাখা যেতে পারে পাতে।
সাপ্লিমেন্ট: দৈনন্দিন খাবার থেকে যদি ভিটামিন ডি-এর চাহিদা পূরণ না হয়, তখন দরকার পড়ে সাপ্লিমেন্টের। তবে এই বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি। নানা রকম ক্যাপসুল পাওয়া যায়। কিন্তু কোন মাত্রায়, কত দিন তা খেতে হবে ডাক্তার বলবেন। কারণ ভিটামিন ডি মাত্রাতিরিক্ত হলে, তা থেকেও সমস্যা হয়।
ফর্টিফায়েড ফুড: যে কোনও খাবারের নিজস্ব পুষ্টিগুণ থাকে। সেই খাবারে বাড়তি ভিটামিন, খনিজ যোগ হলে সেটিকে ফর্টিফায়েড ফুডের তালিকায় ফেলা হয়। বিভিন্ন রকম দানাশস্য, দুধ, কমলালেবুর রসে কৃত্রিম ভাবে ভিটামিন ডি যোগ করা হচ্ছে এখন। সে রকম খাবার খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।
মাশরুম: মাশরুম খেলেও ভিটামিন ডি মেলে। রান্নার আগে কিছুক্ষণ রোদে রাখলে ভিটামিনটি পেতে সুবিধা হয় মনে করেন অনেকে। তবে শিটেক, মইটেক, পোর্টোবোলা মাশরুম খেলেই উপকার বেশি।
কড লিভার অয়েল: কড লিভার অয়েল ভিটামিন ডি-এর অন্যতম উৎস। ক্যাপসুলের আকারে এটি পাওয়া যায়। সাপ্লিমেন্ট হিসাবেও খাওয়া হয়। তা ছাড়া এই তেল এক চামচ খেলেই দৈনন্দিন ভিটামিন ডি-এর চাহিদাপূরণ সম্ভব। এ ছাড়া এতে থাকে ভিটামিন এ, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও। ভিটামিন ডি শরীরে শোষিত হওয়ার জন্য ফ্যাটি অ্যাসিড বা ফ্যাটও জরুরি।
পেটের স্বাস্থ্য: অন্ত্র, পাকস্থলি-সহ হজমে সহায়ক বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ নিয়ে তৈরি হয় গ্যাসট্রোইন্টেসিনাল ট্র্যাক বা জিআই ট্র্যাক। ‘গাট হেলথ’ বলতে বোঝায় এই জিআই ট্র্যাক ভাল থাকা। গ্যাসট্রোইন্টেসিনাল বা পেটের স্বাস্থ্য ভাল না থাকলেও কিন্তু ভিটামিন ডি শোষণে সমস্যা হতে পারে। তাই এ ব্যাপারেও নজর দেওয়া দরকার।
পুষ্টিবিদদের মতে, পর্যাপ্ত সূর্যালোকের পরেও অনেকের শরীরে ভিটামিন ডি ঠিকমতো শোষিত হয় না। সাধারণত লিভার বা সিস্টিক ফাইব্রোসিস, আলসারেটিভ কোলাইটিস, সেলিয়্যাক ডিজ়িজ়ের মতো সমস্যা থাকলে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হতে পারে।