দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলা ভাষা নিয়ে বিজেপির একাধিক মন্তব্য ও অবস্থান ঘিরে ফের তীব্র বিতর্ক। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষীদের উপর একের পর এক হেনস্থার অভিযোগের আবহে এবার সরাসরি প্রতিবাদের পথে নামল সিপিএমের ছাত্র সংগঠন SFI। বিজেপিকে কটাক্ষ করে তারা পাঠাল ‘বর্ণ পরিচয়’ ও ‘সহজ পাঠ’। বুধবার কলকাতায় বিজেপির রাজ্য দফতরে এই দুই বাংলা শিক্ষার বই পাঠানো হয় কুরিয়ার করে। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে জানান, “বাংলা ভাষাকে নিয়ে বিজেপি যে ধরনের অসম্মানজনক মন্তব্য করছে, তা লজ্জাজনক। পরিযায়ী শ্রমিকরা শুধু বাংলায় কথা বলার জন্য আক্রান্ত হচ্ছেন— এ দৃশ্য আমরা বারবার দেখছি। তাই বিজেপি নেতাদের জন্য আমরা ‘বর্ণ পরিচয়’ ও ‘সহজ পাঠ’ পাঠালাম। বাংলা ভাষাটা যাতে ওঁরা নতুন করে শিখতে পারেন, বুঝতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যেই এই কর্মসূচি।”
এদিকে, দিল্লি পুলিশ কর্তৃক বঙ্গভবনে পাঠানো একটি চিঠিতে বাংলা ভাষাকে 'বাংলাদেশি ভাষা' বলে উল্লেখ করাকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। এই চিঠির কপি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের অভিযোগ, দিল্লি পুলিশ বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি ভাষার তকমা দিয়ে গোটা বঙ্গবাসীকে অপমান করেছে। এই ইস্যুতে সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আক্রমণ করেছে তৃণমূল। তাদের দাবি, দিল্লি পুলিশের মতো একটি সংস্থা যদি বাংলা ভাষাকে 'বিদেশি' বলে চিহ্নিত করে, তাহলে তা বিজেপির ভাষানীতির নগ্ন উদাহরণ। বিতর্ক আরও উসকে দিয়েছেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি লেখেন, “বাংলা নামে কোনও একক ভাষা নেই। বাংলাদেশে ব্যবহৃত ভাষা ভারতের বাংলা ভাষা থেকে উচ্চারণ ও গঠনে একেবারে আলাদা। অনুপ্রবেশকারীদের সনাক্ত করার জন্য দিল্লি পুলিশ ‘বাংলাদেশি’ ভাষা বলেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” এই মন্তব্য ঘিরেই ফের ক্ষোভে ফুঁসছে রাজনৈতিক মহল ও বাংলা ভাষা প্রেমীরা। শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিকরাও নিন্দায় সরব হয়েছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলা ভাষার এমন অপমানকে বিজেপি নৈতিকভাবে সমর্থন করছে কি না।
প্রসঙ্গত, এর আগে বিভিন্ন বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের উপর আক্রমণের অভিযোগ উঠে এসেছে। কোথাও বাংলা বলার ‘অপরাধে’ মারধর, কোথাও হেনস্থা— এমন ঘটনা নিয়েই রাজ্যজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ। এর প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ‘ভাষা আন্দোলন’ কর্মসূচি নিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই ইস্যুকে আরও জোরদার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে SFI-র প্রতীকী প্রতিবাদ বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছে দিতে কতটা কার্যকর হবে, তা সময় বলবে। তবে বাংলা ভাষাকে ঘিরে এই সংঘাত যে আরও তীব্র হচ্ছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।