Breaking News
 
Mamata Banerjee: তৃণমূল টিমকে আটকানোর পরেই মমতার কড়া হুঁশিয়ারি: ‘আমি নিজে যাব, কত দম আছে দেখব!’ Mamata Banerjee:ছটপুজোর প্রসঙ্গ টেনে মমতার আক্রমণ: 'বিহারের জন্য ছাড়, আর উত্তরবঙ্গের ভাড়া ১৮ হাজার! এটা কি বৈষম্য নয়?' Tripura:‘গান্ধীবাদ’ ছেড়ে এবার ‘সুভাষ’ হওয়ার ডাক! ত্রিপুরায় ‘পুলিশি সন্ত্রাস’-এর প্রতিবাদে সরব তৃণমূল TMC: আটক তৃণমূল প্রতিনিধি দল, পুলিশি বাধার মুখে ত্রিপুরা বিমানবন্দর কাঁপল 'সন্ত্রাস' বিরোধী স্লোগানে! Mamata Banerjee : হামলার পর রাজ্যজুড়ে উত্তেজনা, মমতার হুঁশিয়ারি— ‘শান্ত থাকুন, উসকানিতে পা দেবেন না’ CM Mamata Banerjee:দুর্যোগে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ— ‘জীবন আগে, দ্রুত নিরাপদ স্থানে যান’

 

West Bengal

1 year ago

Asansol Robbery Case : সাত ডাকাতের এক প্রতিপক্ষ OC!

Asansol Robbery Case (Symbolic Picture)
Asansol Robbery Case (Symbolic Picture)

 

দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ বলিউডি অ্যাকশন থ্রিলারে এমন দৃশ্যে হিরোর ভক্তদের তারিফ আর চিৎকারে সিনেমা হলে কান পাতা দায় হয়ে ওঠে। একা পুলিশ অফিসাররূপী নায়ক লড়ে যাচ্ছেন সাত সশস্ত্র ডাকাতের বিরুদ্ধে! ডাকাতদের হাতে অত্যাধুনিক পিস্তল, কার্বাইন। আর নায়কের হাতে স্রেফ সার্ভিস রিভলভার।

রবিবার দুপুরে রানিগঞ্জবাসীর অ্যাড্রিনালিনের গতি তুঙ্গে তুলে হুবহু এই দৃশ্যই নেমে এলো বাস্তবের মাটিতে। ডাকাতরা সোনার দোকানে লুটপাট চালানোর সময়েই রাস্তার উল্টো দিকের একটি দোকানে ব্যক্তিগত কাজে আসা জামুড়িয়া থানার শ্রীপুর পুলিশ ফাঁড়ির ওসি মেঘনাদ মণ্ডলের চোখে তা ধরা পড়ে যায়। লোকজনের ইতস্তত ছুটোছুটি দেখে সন্দেহ হতে সিভিল ড্রেসে থাকা ওসি রাস্তা পেরিয়ে চলে যান রাস্তার ওপারে। কভার নেন মাত্র ইঞ্চি ছয়েক চওড়া একটি ইলেকট্রিকের পোলের আড়ালে।

দোকানের পাহারায় থাকা ডাকাতদেরও ততক্ষণে সন্দেহ হতে শুরু করেছে। আর নিরাপদে ডাকাতি করা যাবে না আঁচ করে তারা বেরিয়ে আসতে শুরু করে দোকান থেকে। কিন্তু বেরনোর সঙ্গে সঙ্গেই ওসি মেঘনাদ মণ্ডলের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যায় তারা। একটি ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, কালো হেলমেট পরে এক ডাকাত দোকান থেকে বেরোতেই গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। এহেন চ্যালেঞ্জের জন্য ডাকাতদল মোটেই প্রস্তুত ছিল না।

ওই এক গুলিতেই বেশ খানিকটা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে তারা। এক ডাকাতের গায়ে গুলিও লাগে। কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে ডাকাতরা। গুলি, পাল্টা গুলিতে তখন রানিগঞ্জের এনএসবি রোডের তারবাংলা এলাকা যেন অঘোষিত যুদ্ধক্ষেত্র। এই গুলির লড়াই চলতে চলতেই দু’টি বাইকে কোনওমতে জখম সঙ্গীকে নিয়ে চম্পট দেয় ডাকাতরা।

টানটান নাটকে যে তখন আরও দৃশ্য বাকি রয়েছে, কে জানত! ডাকাতরা বাইক স্টার্ট দিতেই পিছন পিছন তাদের ধাওয়া করতে শুরু করেন মেঘনাদ। ফাঁকা রাস্তা, বাইক থেকেই গুলি ছুড়ছে ডাকাতরা! মেঘনাদ দৌড়চ্ছেন তাদের পিছন পিছন। শেষ পর্যন্ত ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের বাঁকে তাঁর দৃশ্যের বাইরে চলে যায় ডাকাতরা। তবে শেষরক্ষা হয়নি। ডাকাতরা পথে একটি গাড়ি ছিনতাই করে, তার মালিককে গুলি মেরে পালিয়েছিল। সন্ধের দিকে ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে সেই গাড়ি ধরে ফেলে সেখানকার পুলিশ।

একজনকে পাকড়াও করা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের ডিসি (সেন্ট্রাল) ধ্রুব দাস। তিনি বলেন, ‘আমাদের অফিসার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। উনি ওদের তাড়াও করেছিলেন। তাঁর ওই ভূমিকার জন্যই দুষ্কৃতীরা যতটা ডাকাতি করতে পারত, ততটা পারেনি।’ ওই সোনার দোকান কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, ডাকাতরা মিনিট পাঁচেক ছিল।

মালিক সুদীপ রায় বলেন, ‘ওইটুকু সময়ের মধ্যেই ওরা যা জিনিস নিয়েছে, তার দাম কোটি ছাড়াতে পারে। একটু ভালো করে হিসেব করলে পুরোটা বোঝা যাবে।’ ডাকাতি হয়তো রোখা যায়নি। কিন্তু রানিগঞ্জ-আসানসোলে দিনভর আলোচনা মেঘনাদকে নিয়ে। এসেছিলেন একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে, নিজের কিছু কাজে। কিন্তু পুলিশের প্রখর ইনস্টিংক্ট তাঁকে জানান দেয়, কিছু গোলমাল হচ্ছে। বিপদের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়তে দু’বার ভাবেননি।

ফেডারেশন অফ সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের অন্যতম নেতা রাজেন্দ্র প্রসাদ খৈতান বলেন, ‘নিজের জীবনের বাজি রেখে উনি যে ভাবে ডাকাতদের সঙ্গে লড়েছেন, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। ওঁর প্রতি রানিগঞ্জের মানুষ কৃতজ্ঞ থাকবেন।’ আর যাঁকে নিয়ে এত কিছু, তিনি কিন্তু চুপ। সাংবাদিকদের প্রশ্ন আর প্রশংসার প্লাবনে তিনি নিরুত্তাপই। কেমন লড়াই হয়েছিল? দু’টি তথ্যই যথেষ্ট।

প্রথম, প্রায় ২০ রাউন্ড গুলি চলেছে। মেঘনাদ তাঁর সার্ভিস রিভলভারের সব ক’টি গুলি চালিয়েছেন। দু’পক্ষের গুলি বিনিময়ে মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির কাচ ফুটো করে বুলেট ঢুকেছে, গাড়ির দরজা ফুঁড়ে গিয়েছে, একটি বাইকেও গুলি লেগেছে। আর দ্বিতীয়, তিনটি বাইকে করে এলেও মেঘনাদের প্রতিরোধের সামনে একটি বাইক ফেলে চম্পট দেয় ডাকাতদল। যাওয়ার সময়ে সোনার দোকানের নিরাপত্তারক্ষীর থেকে ছিনিয়ে নেওয়া বন্দুকও ফেলে পালায়।

রবিবার সকালে তারবাংলা এলাকায় ছিল আর পাঁচটা ছুটির দিনের মতোই। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ জনাসাতেকের সশস্ত্র দুষ্কৃতী সোনার দোকানটিতে ঢোকে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ঢুকেই তারা ধাক্কা মেরে ব্যাঙ্কের নিরাপত্তারক্ষীকে মাটিতে ফেলে দেয়। কাপড়, মুখঢাকা টুপি, হেলমেট— সকলের মুখই কোনও না কোনও ভাবে ঢাকা ছিল। এরপরে একে একে ডাকাতরা বের করে বন্দুক। একজনকে ব্যাগ থেকে কার্বাইনও বের করতে দেখা যায়।

কর্মচারীদের বন্দুকের নলের সামনে রেখে অবাধে তারা চালাতে থাকে লুট। শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় নামে দোকানের এক কর্মী বলেন, ‘ওরা নিজেদের মধ্যে হিন্দিতে কথা বলছিল। একজন বলছিল, দু’মিনিটের মধ্যে সব কাজ সারতে হবে। একটা সাদা ব্যাগে গয়না ঢুকিয়ে নিচ্ছিল ওরা।’ প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ডাকাতদের বয়স ২২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। কার্বাইন আর ভাষার সূত্র ধরে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, ডাকাতরা বিহার বা ঝাড়খণ্ডের একটি দল। কারণ এই ধরনের বেআইনি কার্বাইন পাওয়া যায় বিহারের মুঙ্গেরে।

মেঘনাদের প্রবল চ্যালেঞ্জের মুখে ডাকাতরা রানিগঞ্জ থেকে পালিয়ে কোলিয়ারির রাস্তা ধরে আসানসোলের মহীশিলা কলোনি থেকে দু’টি ভাগে ভাগ হয়ে পালানোর ছক কষে। কিন্তু সে সময়েই একটি ভুল চাল চেলে বসে তারা। দুপুর দেড়টা নাগাদ মহীশিলা কলোনির চক্রবর্তী মোড়ে একটি গাড়ি ছিনতাইয়ের খবর আসে।

জানা যায়, একটি চার চাকা গাড়ি আটকায় চার যুবক। গাড়ি থেকে নামিয়ে চালককে গুলি করে তারা। দুর্গাপুরের বামুনাড়ার বাসিন্দা নয়ন দত্ত গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। ছিনতাই ঠেকাতে গেলে প্রবাল সান্যাল নামে এক স্থানীয় বাসিন্দাকে লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। গুলি তাঁর ডান হাত ছুঁয়ে চলে যায়। নয়নকে প্রথমে আসানসোল জেলা হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রবালকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এই ঘটনার খবর পেয়ে একদিকে যেমন বাংলা থেকে বেরনোর সব রাস্তায় জোরদার নাকা-চেকিং শুরু হয়, তেমনই খবর দেওয়া হয় লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের পুলিশকেও। রাতের দিকে হাতেনাতে ফল মেলে। গাড়ি আটকে একজনকে পাকড়াও করে সেখানকার পুলিশ।

You might also like!