দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা ও তাঁর আত্মীয়দের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আর্থিক লেনদেনের একাধিক প্রমাণ হাতে পেয়েছে ইডি। তদন্তকারীদের দাবি, শুধু নগদ টাকা নয়, অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া ঘুষও ব্যাঙ্কের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে। সিবিআই-এর মামলায় জামিন পেলেও ইডির নজর এড়াতে পারেননি জীবনকৃষ্ণ। আর্থিক দুর্নীতির দিকটি খতিয়ে দেখে এই নতুন তথ্য সামনে এসেছে বলে ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে।
স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় CBI-এর পাশাপাশি তদন্ত করেছে ED-ও। মূলত আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। যে কারণে, CBI-এর পর ED-রও আতসকাচের তলায় ছিলেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। CBI-এর মামলায় জামিন পেলেও, তাঁর উপর নজর ছিল ED-র। সূত্রের দাবি,নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়, তৃণমূল বিধায়ক ও তাঁর আত্মীয়দের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে নগদও। এমনকী অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের ঘুষের টাকা ব্যাঙ্কের মাধ্যমেও নেওয়া হয়েছে বলে ED সূত্রে দাবি।
এর আগেও যখন CBI-এর হাতে ধরা পড়েছিলেন জীবনকৃষ্ণ, তখন কয়েকজন চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে তৃণমূল বিধায়কের কথোপকথনোর প্রমাণ মিলেছিল। CBI সূত্রের দাবি, স্কুলে চাকরি দেওয়ার নাম করে বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের বাসিন্দা দীপক দাসের থেকে ১২ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক। কিন্তু তাঁর চাকরি হয়নি। CBI সূত্রে আরও দাবি, ২০২২-এর ৮, ১১ এবং ১৮ অক্টোবর, তিন দফায় ওই চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে ফোনে কথা হয় বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার। টাকা ফেরত চাওয়ায় ওই চাকরিপ্রার্থীকে ভয়ও দেখান তৃণমূল বিধায়ক। CBI সূত্রে পাওয়া এই কথোপকথন অনুযায়ী, চাকরিপ্রার্থী টাকা ফেরত চাইলে জীবনকৃষ্ণ সাহা বলেছিলেন, 'যে যে পাবে, সবাইকে অর্ধেক অর্ধেক দিয়েছি, শোনো তোমার টাকার অঙ্কটা এমন কিছু নয়, একজন ১৭ পাবে, তাঁকে ৭ দিতে হবে। তুমি ১২ পাবে, ৬ দিয়েছি, বুঝতে পারছো। আসানসোল, সিউড়ি, সবাই ১৭, ১৮ পাবে, তাঁদেরগুলোকে অর্ধেক অর্ধেক দিয়েছি। শোনো টাকা যখন দিতে শুরু লেগেছি, সময় লাগবে, দিয়ে দেব। আর বেশি খিটিমিটি করলে দেব না। যা পারবে করবে, এই হচ্ছে ঘটনা।'
CBI সূত্রে দাবি, ২০২২ সালের ১৮- অক্টোবরের একটি চ্য়াট হিস্ট্রিও পাওয়া গিয়েছিল। যেখানে, চাকরিপ্রার্থী বলছেন,'স্য়র, আমার টাকার দরকার। চারদিক থেকে খুব চাপ আসছে।' উত্তরে জীবনকৃষ্ণ সাহা, বলেন,'আমি অর্ধেক টাকা দিয়েছি। বাকি টাকার জন্য় ধৈর্য ধরতে হবে। বারবার ফোন করলে কিন্তু গ্রেফতার হতে হবে।'
সূত্রের দাবি, ২০২৩-এর ১৫ জুলাই, নিয়োগ দুর্নীতি মামলার সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিয়ে CBI দাবি করেছিল, তৃণমূল বিধায়কের দুটি মোবাইল থেকে এবং তাঁর বাড়ির পুকুরের পাশের জঙ্গল থেকে দু-ব্যাগ ভর্তি নথি উদ্ধার করা হয়েছে। সেইসব নথি থেকেই পরিষ্কার, নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন জীবনকৃষ্ণ সাহা। চাকরির নামে তিনি কোটি কোটি টাকা তুলেছিলেন। কাদের মাধ্যমে সেই টাকা তোলা হয়, সেই বিস্তারিত তথ্যও সিবিআইয়ের সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে উল্লেখ ছিল বলে খবর সূত্রের। এরপর, গ্রেফতারির ১৩ মাস বাদে ২০২৪-এর ১৪ মে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জীবনকৃষ্ণ সাহাকে জামিন দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু CBI মামলায় সুপ্রিম কোর্টে জামিন পাওয়ার, ৩ মাসের মাথায়, SSC নবম-দশম নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় জীবনকৃষ্ণ সাহাকে তলব করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ১ বছর বাদে, সেই অগাস্ট মাসেই, নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করল ED এবার তাঁর আত্মীয়দের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে, ED সূত্রে দাবি করা হচ্ছে।