দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব শারদীয়া দুর্গাপুজো শুধুই ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বাঙালির আবেগ, সংস্কৃতি এবং আত্মপরিচয়ের এক বর্ণময় উৎসব। এই ক'টা দিন পোশাকেও জেগে ওঠে বিশেষ এক বাঙালিয়ানা, বিশেষত বাঙালি নারীর সাজে শাড়ির ভূমিকা অনন্য। আর সেই শাড়ির জগতেই এ বছর দেখা মিলছে অভিনব এক উদ্যোগের — ভাষা আন্দোলনের বার্তা শাড়ির পাড়ে পাড়ে! শান্তিপুর ও ফুলিয়ার তাঁতশিল্পীদের হাতে তৈরি হচ্ছে এক বিশেষ ধরনের তাঁতের শাড়ি, যার পাড়ে বাংলায় হরফে লেখা থাকছে রবীন্দ্রসংগীতের লাইন– ‘পুজোর গন্ধ এসেছে’। আরেকটি শাড়িতে লেখা “আহা তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা।” কারও হাতে বুনছে “প্রিয় আমার ওগো প্রিয়।” এসব লেখা শুধু অলঙ্কার নয়, বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসার এক স্পষ্ট বার্তা। বলা বাহুল্য, বাংলার তাঁতশিল্পের পীঠস্থান শান্তিপুর, ফুলিয়ায় তাঁতে বোনা এসব শাড়ি আসলে বাঙালির আত্মমর্যাদার প্রতীক হয়ে উঠতে চলেছে এবারের পুজোয়।
তাঁতশিল্পীদের দাবি, এই শাড়িই হতে চলেছে এবারের পুজোর সবচেয়ে বড় ‘ট্রাম্প কার্ড’। তবে তাঁতের শাড়ি মানে শুধুই এই ঐতিহ্য, তা কিন্তু নয়। বাঙালির চিরন্তন ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার দারুণ মেলবন্ধনে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের শাড়ি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেসব শাড়ির জন্য বরাত মিলছে। বিদেশেও বিপুল চাহিদা। এই প্রসঙ্গে, ‘পদ্মশ্রী’ প্রাপ্ত বীরেন বসাকের পরিবার জানাচ্ছে, “বাংলা লেখা শাড়ির চাহিদা গতবছর থেকেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু এ বছর সেই চাহিদা আকাশ ছুঁয়েছে। বিদেশ থেকেও প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি আমরা। এসব শাড়ির দাম দেড় হাজার থেকে সাত হাজার টাকা।”
শুধু ঐতিহ্যই নয়, এই শাড়িগুলিতে রয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। টেক্সট ডিজাইন, টাইপোগ্রাফির নিপুণ ব্যবহারে তৈরি হচ্ছে এমন সব শাড়ি, যেগুলি পরার সঙ্গে সঙ্গে ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি এক গভীর সংযোগ তৈরি করবে। শান্তিপুর-ফুলিয়ার তাঁতশিল্পীরা বলছেন, “এই পুজোয় বাঙালির আবেগের শাড়ি হবে একেবারেই বাংলার শাড়ি”। এই শাড়ি কেবল একটি পোশাক নয়, বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসার প্রকাশ এবং সংস্কৃতি রক্ষা হাতিয়ার। অবশ্য, বাংলার মাটিতে পোশাকের মাধ্যমে প্রতিবাদের ইতিহাস নতুন নয়। স্বাধীনতা পূর্ব যুগেও তা ছিল স্পষ্ট। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেশের মানুষকে আহ্বান জানিয়েছিলেন— "মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়, মাথায় তুলে নে রে ভাই..."। তখন যেমন কাপড় ছিল এক প্রতিবাদের প্রতীক, তেমনই আজও পোশাক হয়ে উঠতে পারে আত্মপরিচয় ও ভাষার লড়াইয়ের হাতিয়ার।