দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক :গ্রীষ্মের রাতে গরমে ঘেমে যাওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক নয়।গরমের সময়ে ঘাম হবেই, কিন্তু রাতে যখন তাপমাত্রা নামছে, তখনও যদি দরদর করে ঘাম হতে থাকে, তবে লক্ষণ মোটেই সুবিধার নয়। তবে যদি আপনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে ঘুমোনোর পরেও হঠাৎ ঘামে ভিজে উঠে পড়েন, কিংবা মাঝরাতে জামা-কাপড় ঘামে একেবারে স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়—তাহলে সেটি হতে পারে কোনও অন্তর্নিহিত শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত।এমন কিছু শারীরিক সমস্যা বা অসুখ আছে, তা যদি তলে তলে বাসা বাঁধে, তা হলে তার পূর্বলক্ষণ হতে পারে— অতিরিক্ত ক্লান্তি, দুর্বলতা, শারীরিক অস্বস্তি এবং রাতে শুয়ে ঘাম।
কখন সতর্ক হবেন?
১) মদ্যপান করে শোয়ার পরে ঘাম-
রাতে শোয়ার আগে চা বা কফি অথবা মদ্যপান করলে, শোয়ার পরে ঘাম হতে পারে। ক্যাফিন হরমোন ক্ষরণে বিঘ্ন ঘটায়, ফলে শরীরের প্রদাহ আচমকা বেড়ে যেতে পারে। দিনের পর দিন এমন হতে থাকলে তা লিভারের রোগের পূর্বলক্ষণ হতে পারে।
২)অবসাদ হচ্ছে না তো?
রাতে শুয়ে দুশ্চিন্তা,উৎকণ্ঠাও শরীরের গ্রন্থিগুলিকে সক্রিয় করে তোলে। অতিরিক্ত উদ্বেগের কারণেও এমন হতে পারে। তলে তলে যদি অবসাদ বাসা বাঁধে, তার থেকেও শরীরের তাপমাত্রায় বদল আসতে পারে। তাই মানসিক চাপ যাতে না বাড়ে, সে দিকে সাবধান হতে হবে।
৩)হরমোনের গোলমাল
রক্তে থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনের পরিমাণ যদি বেড়ে যায়, তখন তাকে বলে ‘হাইপারথাইরয়েডিজ়ম’ । সে ক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। রাতে শুয়েও ঘাম হতে পারে। সে ক্ষেত্রে থাইরয়েড হচ্ছে কি না, তার পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।
৪)ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বিশেষ কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এমন হতে পারে। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ,অবসাদ কমানোর ওষুধ, মুঠো মুঠো ব্যথানাশক ওষুধ খেলে বা হরমোন থেরাপি করালে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এমন হতে পারে।
৫)ক্যানসারের লক্ষণ?
রক্তের ক্যানসার বা লিউকেমিয়া রোগে আক্রান্ত হলে রক্তের মধ্যে থাকা শ্বেত রক্তকণিকাগুলির অনিয়ন্ত্রিত গঠন ও বিস্তার হতে থাকে। সেই সময়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয় শরীরের ভিতরে। লসিকাগ্রন্থি অস্বাভাবিক রকম ফুলে যায়। যকৃৎ ও প্লীহার আকার বাড়তে থাকে। ফলে বিভিন্ন লক্ষণ ফুটে ওঠে শরীরে। রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে, রাতে শুয়ে ঘামও হয়। তাই যদি দিনের পর দিন এমন উপসর্গ দেখা দিতে থাকে, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ:
যদি রাতের ঘাম নিয়মিত হয় এবং এর সঙ্গে থাকে ওজন কমে যাওয়া, দুর্বলতা, অনিদ্রা বা জ্বর—তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ জরুরি। শুধুমাত্র গরম নয়, শরীরের ভেতরের অস্বাভাবিকতা থেকেও এটি হতে পারে।
কী করবেন?
* ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন
*হালকা পোশাক পরে ঘুমান
*রাতে চা, কফি বা অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন
*মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন
*নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করান
রাতের ঘামকে হালকাভাবে নিলে চলবে না। এটি শুধুই গরমের ফল নয়, হতে পারে শরীরে বড় কোনও অসুখের পূর্বাভাস। তাই সময়মতো সতর্ক হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।