West Bengal

2 hours ago

Migrant Workers: নেপালে আটকে উত্তরবঙ্গের শ্রমিকরা, ফেরার পথ বন্ধ নানান জটিলতায়!

Northern workers in crisis in Nepal
Northern workers in crisis in Nepal

 

দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: ভিনরাজ্য ও বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের কষ্টের শেষ নেই। সাম্প্রতিক নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে উত্তরবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর। নেপালের বিভিন্ন অঞ্চলে বর্তমানে আটকে রয়েছেন আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলার অনেক শ্রমিক। দেশে ফেরার পথে তারা নানা নথি সংক্রান্ত জটিলতা বা গাড়ি না পাওয়া সমস্যার কারণে দেশে ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছেন। 

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শ্রমশ্রী অনুদানের টাকা পাওয়ার চক্করে অলিপুরদুয়ারের প্রায় ১৫০ জন পরিযায়ী আপাতত আটকে নেপালে। ধুলাবাড়ির একটি প্লাইউড কারখানায় কাজ করতেন তাঁরা। শ্রমশ্রীর টাকা পাওয়ার জন্য নেপালে কাজ করার প্রমাণ দিতে হবে। সেই শ্রম কার্ড বানানোর জন্য শ্রমিকরা সেই কারখানা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাঁদের আধার ও ভোটার কার্ড জমা দিয়েছিলেন নেপালের শ্রম দপ্তরের সরকারি অফিসে। তারপর সেই নথি আর ফেরত পাননি। পাবেন কী করে? অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির জন্য নেপালে শুক্রবারও কার্ফিউ জারি রয়েছে। থমথমে নেপাল থেকে বাড়ি ফিরতে মরিয়া আতঙ্কিত পরিযায়ী শ্রমিকদের হাতে এখন নেই ভারতীয় পরিচয়পত্র। এদিন খড়িবাড়ির পানিট্যাঙ্কি সীমান্ত দিয়ে এদেশে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন কয়েকজন। কিন্তু এসএসবি’র জওয়ানরা মেচি সেতুতেই অধিকাংশকে আটকে দিয়েছেন। ছাড় পেয়েছেন কারা? যাঁদের মোবাইলে ভোটার কার্ড বা আধার কার্ডের ছবি রয়েছে।

আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা এক্রামূল হক বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি ঘোষণা করেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের মাসিক ৫ হাজার টাকা দেবে সরকার। তাই যেখানে কাজ করি, সেখানকার একটি প্রমাণপত্র লাগবে। সেই প্রমাণপত্র বানানোর জন্য কারখানার কর্তৃপক্ষকে ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড দিয়েছি। পরিচয়পত্রগুলি নেপালের শ্রম দপ্তরের অফিসে জমা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারপর আর কোনও নথি হাতে পাইনি।’  এসএসবি’র এক আধিকারিক জানালেন, অনেক টানাপোড়েনের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মোবাইলে যাঁদের আসল ভোটার ও আধার কার্ডের ছবি ছিল, তাঁদের পানিট্যাঙ্কি সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। এদিন শেষপর্যন্ত ১৯ জন পরিযায়ী শ্রমিক ভারতে ঢুকতে পেরেছেন।

আবার আলিপুরদুয়ার জেলারই কুমারগ্রাম ব্লকের জনা সাতেক পরিযায়ী শ্রমিক নেপালে আটকে রয়েছেন। নেপালের বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁরা বাড়ি ফিরতে চাইলেও গাড়ি পাচ্ছেন না বলে আটকে পড়েছেন। তাঁদেরই একজন বিক্রম রায়ের মা বিলাসী রায় বললেন, ‘আমার ছেলে সেখানে আটকে রয়েছে। অবিলম্বে প্রশাসনের তরফে তাদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হোক।’ শ্রম দপ্তরের আলিপুরদুয়ার জেলার যুগ্ম আধিকারিক গোপাল বিশ্বাস আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করার কাজ চলছে। সমস্ত রিপোর্ট পেলে পুলিশকে জানাব। তাঁদের বাড়িতে ফেরার ব্যবস্থা শ্রম দপ্তর করবে।’ কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জের জনা পঁচিশেক শ্রমিকও সেখানে আটকে রয়েছেন। তাঁরা নাটাবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। কারখানা লাগোয়া আবাসনেই থাকেন তাঁরা। এখন সেখানে নেই পর্যাপ্ত খাবার। সেইসঙ্গে অভিযোগ, আবাসনে ঢুকে পরিযায়ী শ্রমিকদের মারধর করছেন স্থানীয়রা।

তাঁদের বাড়ি ফিরতে যত দেরি হচ্ছে, ততই উদ্বেগ বাড়ছে পরিজনদের। হাপালমারার বাসিন্দা মিনতি দাসের বড় ছেলে জ্ঞানেন্দ্র দাস রয়েছেন নেপালে। চিন্তাগ্রস্ত মিনতি বলছিলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল। বলছিল, সেখানে বাজারঘাট, দোকান সব বন্ধ। পর্যাপ্ত খাবার ও জল নেই তাদের কাছে। যা টাকা ছিল তাও প্রায় শেষ। আমাদেরও আতঙ্কে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ।’ হরেকৃষ্ণ দাসের ছেলে কমল দাসও নেপালে আটকে রয়েছেন। কমলই বৃহস্পতিবার বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছেন মারধরের কথা। চিন্তায় তাই ঘুম উড়েছে হরেকৃষ্ণের বাড়ির লোকজনের। আলিপুরদুয়ারের জেলা প্রশাসনের মতোই তুফানগঞ্জ মহকুমা শাসক বাপ্পা গোস্বামীও আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে শ্রম দপ্তরের সঙ্গে কথা বলেছি। শ্রমিকদের ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

You might also like!