দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডারে সবচেয়ে পবিত্র দিনগুলির মধ্যে একটি হল গুড ফ্রাইডে, যা বিশ্বব্যাপী যীশু খ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধকরণ উপলক্ষে পালিত হয়। আজকের দিনটি পবিত্র সপ্তাহের অংশ, এর আগে গতকাল ছিল মন্ডি বৃহস্পতিবার এবং তারপরে পবিত্র শনিবার। আজকের পবিত্র শুক্রবার, গ্রেট ফ্রাইডে বা ব্ল্যাক ফ্রাইডে নামেও পরিচিত, এই দিনটি খ্রিস্টানদের কাছে গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বহন করে, যা মানবতার মুক্তির জন্য যীশু খ্রিস্টের কষ্ট এবং আত্মত্যাগের প্রতীক।
∆ গুড ফ্রাইডের ইতিহাসঃ নিউ টেস্টামেন্ট অনুসারে, গুড ফ্রাইডে হলো রোমান গভর্নর পন্টিয়াস পিলেটের আদেশে যীশু খ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধ করার দিনটিকে স্মরণ করা। সেই সময়ের ধর্মীয় নেতারা যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র বলে দাবি করার জন্য ধর্মনিন্দার অভিযোগ এনেছিলেন এবং তাকে রোমান কর্তৃপক্ষের সামনে হাজির করেছিলেন।জনসমক্ষে বিচারের পর, যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করার শাস্তি দেওয়া হয় - যা সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ বলেই বিবেচিত। তাকে কাঠের ক্রুশ বহন করতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং তারপর তাকে পেরেক দিয়ে বিদ্ধ করা হয়েছিল, অবশেষে ক্রুশে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল যীশু খ্রিস্টকে, খ্রিস্টানরা এটিকে মানবজাতির পাপের জন্য চূড়ান্ত বলিদান বলে বিশ্বাস করে।
মাত্র ৩৩ বছর বয়সে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল যিশুকে। দিনটি ছিল এক শুক্রবার। কিন্তু যে দিনটির সঙ্গে এমন বেদনাদায়ক ইতিহাস সেই দিনটিকে কেন গুড ফ্রাইডে বলা হয়? এর পিছনে দুটি তত্ত্বের কথা বলা হয়ে থাকে। এক, গুড ফ্রাইডে আসলে গডস ফ্রাইড নাম ছিল, পরে তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। দুই, গুড ফ্রাইডে বলার কারণ ক্রুশবিদ্ধ করার পর যিশুর মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল ৭টি অন্তিম মহান বাক্য। যা আজও এই বিশেষ দিনে স্মরণ করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। খ্রিস্টমতাবলম্বীরা এই দিনেই যিশুর ৭টি অন্তিম বাক্য পেয়েছিলেন বলে দিনটিকে মনে করা গুড ফ্রাইডে।
∆ গুড ফ্রাইডে-এর তাৎপর্যঃ খ্রিস্টানদের জন্য, গুড ফ্রাইডে হল শোক, প্রতিফলন এবং অনুতাপের দিন। এটি যীশু খ্রিস্টের আত্মত্যাগের গভীরতা এবং মুক্তির আশার প্রতিনিধিত্ব করে। এটি উপবাস, প্রার্থনা এবং গির্জার প্রার্থনার মাধ্যমে পালন করা হয় যা খ্রিস্টের শেষ সময় এবং তাঁর মৃত্যুর কথা স্মরণ করে। অনেক খ্রিস্টান সম্প্রদায় বিশেষ গির্জার প্রার্থনা, ধর্মগ্রন্থ পাঠ এবং নীরব শোভাযাত্রার মাধ্যমে এই দিনটি উদযাপন করে। গির্জাগুলি প্রায়শই মূর্তি, মৃদু আলো এবং ঘণ্টা বাজিয়ে আজকের দিনের বিষণ্ণতা প্রতিফলিত করে। উপবাস এবং দাতব্য কর্মও সাধারণত অনুশীলন করা হয়।
পবিত্র শুক্রবার অর্থাৎ গুড ফ্রাইডের তৃতীয় দিনে যিশু ফের পুনরুজ্জীবিত হন বলে মনে করা হয়। ওই দিনটি ছিল রবিবার। এর পর ৪০ দিন পর্যন্ত তিনি তাঁর অনুগামীদের উপদেশ দিয়ে যান। যিশুর পুনরুজ্জীবন বা রেসারেকশনের ঘটনাটি ইস্টার সানডে হিসেবে পালিত হয়। এদিন সকালে প্রার্থনা করা হয়। যাকে সানরাইজ সার্ভিসও বলা হয়।
∆ যীশুর শেষ সাতটি বাণীঃ
১. "পিতা, এদের ক্ষমা করো, কারণ এরা জানে না এরা কি করছে";
২. "তুমি আমার সাথে পরমদেশে থাকবে";
৩. "নারী, দেখ তোমার পুত্র!";
৪. “এলি, এলি, লামা শবক্তানী?” অর্থাৎ, “আমার ঈশ্বর, আমার ঈশ্বর, তুমি আমাকে কেন পরিত্যাগ করেছ?”;
৫. "আমি তৃষ্ণার্ত!";
৬. "সমাপ্ত হল!";
৭. “পিতা, 'তোমার হাতে আমি আমার আত্মা সমর্পণ করি'”;
∆ গুড ফ্রাইডের বিশেষ বার্তাঃ ১. আজকের দিনেই নিজের বলিদান দিয়েছিলেন যিশুখ্রিস্ট। আসুন আমরা তাঁর পবিত্র উৎসর্গকে স্মরণ করি। আপনার উপর করুণাময় ঈশ্বরের কৃপাদৃষ্টি বর্ষিত হোক;
২. মানবজাতির উন্নয়নের জন্য নিজেকে বলি দিয়েছিলেন যিশুখ্রিস্ট। তাঁর পবিত্র বাক্য যেন সবসময় আমাদের মননে থাকে;
৩. এমনই এক পবিত্র শুক্রবার খ্রিস্টধর্মে স্মরণীয় হয়ে আছে ওই যুগপুরুষের জন্য। আসুন তাঁকে সবাই মিলে স্মরণ করি। তোমার উপর করুণাময় ঈশ্বরের কৃপাদৃষ্টি বর্ষিত হোক;
৪. ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগে যিশু বলে গিয়েছিলেন তাঁর শেষ ৭ পবিত্র বাণী। এই বাণী যেন আজীবন আমাদের পাথেয় হয়ে থাকে;
৫. আপনার জীবনে শান্তি আসুক। সব বাধা বিপত্তি কেটে যাক। যিশুর করুণা আপনার উপর বর্ষিত হোক আজীবন।