দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলার বীর বিপ্লবী শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর নাম ও পরিচয় বিকৃতির অভিযোগে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হিন্দি সিনেমায় ক্ষুদিরামকে ‘ক্ষুদিরাম সিং’ এবং পাঞ্জাবের ছেলে বলে দেখানোয় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। সোমবার, ক্ষুদিরামের শহিদ দিবসে বিজেপিকে কড়া আক্রমণ শানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন— এভাবে ভাষা সন্ত্রাসীরা বাংলার ইতিহাসকে বিকৃত করছে, অপমান করা হচ্ছে অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের আত্মবলিদানকে।
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর হাতে পৌঁছয় এক বিরল ঐতিহাসিক নথি— ফোর্ট উইলিয়ামে সংরক্ষিত বেঙ্গল হাইকোর্টের রায়, যেখানে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে, “ত্রৈলোক্যনাথ বসুর পুত্র ক্ষুদিরাম বসুকে তাঁর অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় প্রাণদণ্ড দেওয়া হচ্ছে।” ১৯০৮ সালের ১৩ জুলাই হাইকোর্টের দুই বিচারপতি এই রায়ে ক্ষুদিরামের আপিল খারিজ করে সেশন কোর্টের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন। মুখ্যমন্ত্রী এই দলিল দেখে আবেগাপ্লুত হন এবং জানান, এটি পুলিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হবে, যাতে গোটা দেশ বাংলার বিপ্লবী ইতিহাসকে সামনে থেকে দেখতে পায়। এই প্রসঙ্গে তিনি সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘সম্প্রতি একটি হিন্দি ছবিতে বিপ্লবী ক্ষুদিরামকে ‘সিং’ বলা হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁদের অপমান করা হচ্ছে কেন? পথিকৃৎ অমর বিপ্লবী ক্ষুদিরামকে ধরেও টানাটানি করবে ভাষা-সন্ত্রাসীরা? আমাদের মেদিনীপুরের অদম্য কিশোরকে দেখানো হয়েছে পাঞ্জাবের ছেলে হিসাবে। অসহ্য!’’
ইতিহাসবিদদের মতে, হিন্দি সিনেমায় ক্ষুদিরামের পদবি বদলে দেওয়া এবং তাঁকে পাঞ্জাবের ছেলে বলে দেখানো নিছক ভুল নয়— এর পিছনে রয়েছে সচেতন ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টা। তাঁদের যুক্তি, বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে বিপ্লবীদের অবদান ছিল অতুলনীয়, অথচ সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ‘বাংলা’ বললেই মানুষকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে, দেওয়া হচ্ছে এনআরসি-র নোটিস। এর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা গেলে ক্ষুদিরামের পরিচয় বিকৃতি এক ধরনের সাংস্কৃতিক আক্রমণ বলেই মনে করছেন তাঁরা। ক্ষুদিরামের আত্মবলিদানের কথা নতুন করে স্মরণ করিয়ে ইতিহাসবিদরা জানান— ব্রিটিশ আমলে মুজফফরপুরে বিচারপতি কিংসফোর্ডকে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে বোমা নিক্ষেপ করেন অনুশীলন সমিতির কিশোর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু। যদিও কিংসফোর্ড বেঁচে যান, মারা যান দুই ব্রিটিশ মহিলা। ধরা পড়ার আগে আত্মহত্যা করেন প্রফুল্ল চাকি, আর গ্রেপ্তার হন ক্ষুদিরাম। বিচারের পর তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট, মাত্র ১৮ বছর বয়সে, তিনি ফাঁসির মঞ্চে ঝুলে পড়েন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষুদিরামের ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ জানায়নি। তিনিই একমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি এই সাংস্কৃতিক অবমাননার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তাঁর উদ্যোগে ক্ষুদিরামের ফাঁসির রায়ের ঐতিহাসিক নথি এবার বাংলার মানুষের সামনে আসতে চলেছে, যার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম জানবে— বাংলার কিশোর বিপ্লবীর আত্মত্যাগ কোনওভাবেই খাটো করা যাবে না।
"একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) August 11, 2025
হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী"
বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর প্রয়াণ দিবসে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম।
একটা কথা লিখি। সম্প্রতি একটি হিন্দি ছবিতে বিপ্লবী ক্ষুদিরামকে 'সিং' বলা হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁদের অপমান করা হচ্ছে কেন? পথিকৃৎ…