
দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: শীতকাল মানেই উৎসব, কম্বল জড়িয়ে আরাম, গরম খাবারের হাতছানি। কিন্তু এই মরশুমটাই অনেকের কাছে নীরব মনখারাপের সময়। কারণ না জেনেই দিনের পর দিন মন ভারী থাকা, সারাক্ষণ ক্লান্তি, বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে না করা, একাকিত্বে ভোগা কিংবা অকারণ বিষণ্ণতাকে আমরা প্রায়শই শীতের অলসতা বলে এড়িয়ে যাই। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উপসর্গগুলিকে হালকাভাবে নেওয়া ঠিক নয়। এগুলি হতে পারে সিজনাল অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডার বা সংক্ষেপে ‘স্যাড’-এর লক্ষণ।
চিকিৎসকদের মতে, সিজনাল অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডার এক ধরনের মৌসুমি বিষণ্ণতা, যা সাধারণত শীতকালে দেখা যায়। এই সময় দিনের আলো কমে যাওয়ায় শরীরে মেলাটোনিন ও সেরোটোনিন হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। এর ফলেই মন খারাপ, শক্তিহীনতা, অতিরিক্ত ঘুম, মনোযোগের অভাব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি বাড়তে থাকে। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, স্যাড-এর অন্যতম সমস্যা হল—অনেকেই এটিকে রোগ বলে মনে করেন না। ফলে সময়মতো চিকিৎসা বা পরামর্শ নেওয়া হয় না। দীর্ঘদিন এই অবস্থাকে উপেক্ষা করলে তা ডিপ্রেশনের গভীর রূপ নিতে পারে।
লক্ষণগুলি কী কী?
স্যাড-এ আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণত বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। এর মধ্যে প্রধান হল—
১ ) সারাদিন মন ভার বা খালি খালি লাগা।
২) আগে যে কাজগুলিতে আনন্দ পাওয়া যেত, তাতে আগ্রহ কমে যাওয়া।
৩) শক্তি ও উদ্যম কমে যাওয়া, সারাদিন অলস ভাব।
৪) অতিরিক্ত ঘুম বা সারাদিন তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকা।
৫) মিষ্টি বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের প্রতি তীব্র ঝোঁক।
৬) ওজন বেড়ে যাওয়া।
৭) কোনও বিষয়ে মনোযোগ দিতে অসুবিধা।
৮) নিঃসঙ্গতা, অপরাধবোধ তৈরি হওয়া।
শীতকালে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে গ্রীষ্মকালে কিছু মানুষের মধ্যে এর উলটো প্রভাব দেখা যায়। গ্রীষ্মকালীন স্যাড-এর লক্ষণগুলির মধ্যে অনিদ্রা, কম খিদে, উদ্বেগ ও খিটখিটে মেজাজ প্রধান। বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে স্যাড-এর ঝুঁকি বেশি থাকে।
কখন সতর্ক হবেন?
যদি এই মন খারাপ বা বিষণ্ণতা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে, ঘুমের ধরনে বা খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসে, অথবা কোনও কাজে আগ্রহ না পান, তবে দ্রুত একজন মনোবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। যদি হতাশা বাড়ে বা আত্মহত্যার চিন্তা আসে, তবে দ্রুত হাসপাতালে যান।
প্রতিরোধ করবেন কীভাবে?
স্যাড মোকাবিলায় জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আশু প্রয়োজন।
১) দিনের বেলায় অন্তত ২০-৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে সময় কাটান।
২) ঘরে যথেষ্ট পরিমাণে সূর্যের আলো থাকা বাঞ্ছনীয়।
৩) প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট যোগব্যায়াম করুন।
৪) ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
৫) বন্ধুদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখুন।
৬) সকলের সঙ্গে মিশুন। গল্প করুন। কথা বলুন।
৭) অলস করে না রেখে নিজেকে ব্যস্ততায় রাখুন।
সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে লাইট থেরাপি, সাইকোথেরাপি এবং প্রয়োজনে ওষুধের সাহায্যে মরশুমি বিষণ্ণতা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
