
দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের অনেক আগেই বাংলার রাজনৈতিক ময়দান কার্যত কুরুক্ষেত্রের রূপ নিয়েছে। মঙ্গলবার একদিকে কলকাতা থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন তৃণমূল সরকারকে উৎখাত করে বিপুল জয়ের স্বপ্ন ফেরি করছেন, অন্যদিকে বাঁকুড়ার জনসভা থেকে ঠিক ততটাই আক্রমণাত্মক মেজাজে তার জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করার পাশাপাশি তাঁকে ‘দেশছাড়া’ করার হুঙ্কারও দিলেন তৃণমূল নেত্রী। বলছেন, দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে জিতবেন। এবার তো বলছেন না, ‘আব কি বার/২০০ পার।’ আমি বলতে চাই, এবার আপনাকে দেশ থেকে বার। আবার বাংলার ক্ষমতায় এসে গণতান্ত্রিকভাবে দেশ থেকে বার করে দেব।”
এর আগেও একাধিকবার নানা ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশে যে কোনও জঙ্গি কার্যকলাপ কিংবা হামলা ঘটলেই সুরক্ষা প্রশ্নে সবার আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে দায়ী করেন বিরোধীরা। সেই সূত্রে তৃণমূলও বারবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে সরব হয়েছেন। তবে এবার সম্পূর্ণ অন্য প্রসঙ্গে এই দাবি তুললেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এসআইআর পর্বে অনুপ্রবেশকারীদের বেছে বেছে তাড়ানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অমিত শাহ। সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিরুদ্ধে ভোটব্যাঙ্ক বজায় রাখতে অনুপ্রবেশে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তাতেই পালটা মমতা প্রশ্ন তোলেন, ”অনুপ্রবেশ কি শুধু বাংলায় ঘটে? কাশ্মীর বা অন্য কোনও সীমান্ত রাজ্যে হয় না? তাহলে দেশে অনুপ্রবেশ করে পহেলগাঁও হামলা করল চালাল? আপনারা কী করছিলেন?”
একই ইস্যুতে শাহ আরও অভিযোগ করেছেন, সীমান্ত সুরক্ষার জন্য কাঁটাতার বসানোর জন্য জায়গা দেয় না রাজ্য সরকার। কিন্তু মমতা পালটা জবাবে বললেন, ”রায়গঞ্জ, চ্যাংড়াবান্ধা, ঘোজাডাঙায় আমরা জমি না দিলেন কী করে কাজ করতেন? অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়ার দায়িত্ব তো বিএসএফের। তারা কেন রুখতে পারে না?” এরপরই কার্যত গর্জে উঠে বলেন, ইউ মাস্ট রিজাইন। আপনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিন।”
বাঁকুড়ার বড়জোড়ার সভা থেকে তিনি বললেন, “ওয়াকফ সম্পত্তি কাড়তে দেব না।” তাঁর সাফ কথা, “কোনও ধর্মস্থানে কাউকে হাত দিতে দেব না।”সংশোধিত ওয়াকফ বিল (Waqf Bill) পাশ হয়ে, এখন তা আইনে পরিণত হয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী, কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবে ঘোষণা করার অধিকার শুধুমাত্র ওয়াকফ বোর্ডের হাতে থাকবে না। জেলাশাসক বা সেই পদমর্যাদার কোনও আধিকারিক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এই আইন পাশ হতেই দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলার মুর্শিদাবাদও। তৃণমূল-সহ একাধিক রাজনৈতিক দল এই আইনের বিরোধিতা করে। সুপ্রিম কোর্টে এই আইন নিয়ে মামলাও হয়েছে। সেখানেই কেন্দ্রের তরফে বলা হয়েছিল, “একটা ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করা হয়েছে যে নতুন ওয়াকফ আইনে মুসলিমদের সব সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হবে। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। তাছাড়া সরকারের কোনও সম্পত্তি যদি ওয়াকফ বোর্ড দখল করে নেয়, তাহলে সেটা কেন্দ্র ফেরত চাইতেই পারে।” সম্প্রতি কেন্দ্রীয় পোর্টালে ওয়াকফ সম্পত্তি নথিভুক্তকরণের কাজও শুরু হয়েছে। এসবের মাঝে মঙ্গলবার বাঁকুড়ার সভায় মমতার মুখে ফের শোনা গেল সেই ওয়াকফ প্রসঙ্গ। তিনি বললেন, “আমরা যতদিন আছি ওয়াকফ সম্পত্তি কাড়তে দেব না। কোনও ধর্মস্থানে কেউ হাত দিতে পারবে না। আমি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করি না। মন্দির, মসজিদ, গির্জা কিছুই ভাঙতে দেব না।” মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে কিছুটা স্বস্তিতে আমজনতা।
