দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: দেবী কালিকা রক্তবর্ণের জিহ্বাকে শ্বেত দন্তে সংযত করে রেখেছেন, যা আসলে রজঃগুণকে (লাল রং) সত্ত্বগুণ (সাদা রং) দ্বারা নিয়ন্ত্রণের প্রতীকী প্রকাশ।সাদা দাঁত দিয়ে লাল জিভকে চেপে রাখার অর্থ সত্ত্বগুণ দ্বারা রজঃগুণকে বশীভূত করে রাখা। বাকের নিয়ন্ত্রণ করা, কু প্রবেশের দ্বার রূদ্ধ করা। দাঁত হল কপাট।
মহানির্ব্বাণতন্ত্রের ব্যাখ্যা ~
'গ্রসনাৎ সর্ব্বসত্ত্বানাং কালদন্তেন চর্ব্বণাৎ।
তন্ত্ক্তসংঘো দেবেশ্যা বাসোরূপেণ ভাষিতম্॥'
-মহানির্ব্বাণতন্ত্র: ত্রয়োদশ উল্লাস, ৯ শ্লোক
প্রলয় কালে কালী সমস্ত প্রাণীকে গ্রাস ও কালরূপ দন্তে চর্বণ করেন বলে প্রাণীদের রক্ত-সংঘাতই সেই দেবেশ্বরী কালীর রক্তবস্ত্র- এমন বলা হয়ে থাকে।
কালীর লোল জিহ্বা শক্তির এই সংহার রূপের দ্যোতক। সর্ব সংহারক কাল কালীর দন্তস্বরূপ, অর্থাৎ কালরূপ দন্ত সহযোগেই কালী সকল সৃষ্ট পদার্থকে সংহার কালে চর্বণ করেন।
ত্রিনয়ন~
চন্দ্র বা সোম তিথিরূপ কালের এবং সূর্য অহোরাত্র কালের সম্পাদক। চন্দ্র-সূর্যের গতি অনুসারেই দিবা, রাত্রি ও সন্ধ্যা সৃষ্টি হয়। দিবা সূর্য স্বরূপ, রাত্রি চন্দ্র স্বরূপ এবং সন্ধ্যা ও উষা অগ্নিস্থানীয়। চন্দ্র, সূর্য ও সন্ধ্যা-উষা কালেই জগতের যাবতীয় ঘটমানতা অর্থাৎ উৎপত্তি, বিদ্যমানতা, বিবৃদ্ধি, বিপরিণাম, অপক্ষয় ও বিনাশ।
অর্থাৎ দেবীর তিন চোখ তিনটি আলো বা জ্ঞানের প্রতীক— চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নি। অর্থাৎ, আলোকের প্রতীক। তিন চোখে দেবী অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে, অর্থাৎ সৃষ্টি, স্থিতি, লয়কে যুগপৎ প্রত্যক্ষ করেন।
নিত্যায়া~ কালরূপায়াঃ অব্যয়ায়াঃ শিবাত্মনঃ।
অমৃতত্বাল্ললাটেইস্যা শশিচিহ্নং নিরূপিতম্।
শশিসূর্যাগ্রিভির্নেত্রৈরখিলং কালিকং জগৎ।
সম্পশ্যতি যতস্তম্মাৎ কল্পিতং নয়নত্রয়ম্ ॥'
মহানির্ব্বাণতন্ত্র~ ত্রয়োদশ উল্লাস, ৭-৮ শ্লোক
তিনি সনাতনী, অর্থাৎ তাঁর আদি বা অন্ত নাই এবং তিনি এক ভাবে সতত সংস্থিতা। তিনি কালরূপিণী, তাঁর ক্ষয় নাই। তিনি শিবাত্মিকা ও কল্যাণময়ী। তাঁর অমৃতময় স্বরূপের নির্দেশক হিসাবে তাঁর ললাটে শশিকলা কল্পিত হয়েছে। তিনি চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নি– এই তিনটি নেত্রে সমস্ত কালসম্ভূত জগৎ পর্যবেক্ষণ করছেন। তাই তাঁর তিনটি নয়ন কল্পনাঙ্কিত হয়েছে ।
মা কালীর ললাটস্থিত চন্দ্রের ষটচক্রগত দৃষ্টিভঙ্গীতে অন্য ব্যাখ্যাটি হল– ষটচক্রের বর্ণনানুযায়ী ভ্রু মধ্যস্থিত আজ্ঞাচক্রটি হল চন্দ্রস্থান। এই আজ্ঞাচক্রের উপরেই চন্দ্রমার পঞ্চদশ কলা বিদ্যমান।