দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: বছরের নানা সময়ে কালীপূজা অনুষ্ঠিত হলেও, দুর্গাপূজার পরের অমাবস্যায় পালিত হয় এর প্রধান উৎসব। দুর্গাপূজা যখন বিপুল ব্যয় ও ব্যাপকতার কারণে মূলত বৃহত্তর এলাকার আয়োজন, কালীপূজা তখন থেকেই পাড়ায় পাড়ায় অনুষ্ঠিত। এই পূজাকে ঘিরে একসময় পাড়ায়-পাড়ায় লড়াইও ছিল নজরকাড়া। রামপ্রসাদ, বামাখ্যাপা থেকে শুরু করে রামকৃষ্ণদেব— বাঙালির প্রায় সমস্ত সাধক ও বিপ্লবীরা মা কালীর আরাধনা করেছেন। এইভাবেই মা কালীর মহিমা ছড়িয়েছে সারা ভারতে, বিশেষত বাঙালি সমাজে। আর সেই কারণেই রসিকজনেরা একসময় বলে গিয়েছিলেন সেই প্রবাদ— ‘জয় কালী কলকাত্তাওয়ালি, জোরসে বোলো আর বাজাও তালি।’
অসীম শক্তির প্রতীক মা কালী, সেই শক্তিকে আবদ্ধ রাখার সাধ্য কোনও বস্ত্রের মধ্যে নেই, তাই তিনি দিগম্বরী। এই ত্রিনয়না দেবী মা কালী আসলে দেবী মহামায়ার চণ্ড রূপ। অসুর রক্তবীজের সেনাবাহিনীকে প্রচণ্ড যুদ্ধে পরাজিত করে, দেবতাদের স্বর্গরাজ্য ফিরিয়ে দিয়ে প্রচণ্ড বিজয় নৃত্য শুরু করেন মা কালী। তখন সৃষ্টি স্থিতিকে ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে বঁাচাতে স্বয়ং মহাদেব শুয়ে পড়েন মা কালীর পায়ের নিচে। পায়ের নিচে স্বামীকে পড়ে থাকতে দেখে লজ্জিত হন দেবী এবং জিভ কাটেন তিনি। গলায় চারদিকে অসুরদের কাটা মুণ্ড-সহ এলোকেশী দিগম্বরীরূপে পায়ের নিচে শিবকে নিয়েই পূজিত হন বাংলায় মা কালী।
দেবী কালীর মোট আটটি রূপ থাকলেও, যেহেতু রামকৃষ্ণদেব কৃষ্ণকালীরূপে দেবীর আরাধনা করেছিলেন, তাই সারা বাংলায় এর ব্যাপক প্রসার আছে। কলকাতায় বড় কালী মন্দিরগুলির মধ্যে মা সতীর একান্ন পীঠের অন্যতম কালীঘাট। এখানে দেবীর চারটি আঙুল পড়েছিল এবং কালীপুজোর দিন দেবীর লক্ষ্মীরূপের আরাধনা করা হয়। অন্যদিকে, রানি রাসমণির প্রতিষ্ঠা করা ভবতারিণীর মন্দির অর্থাৎ দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির ছিল রামকৃষ্ণদেবের লীলাক্ষেত্র। এছাড়াও বিখ্যাত কবিয়াল অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির প্রতিষ্ঠা করা বউবাজারের কালী, বিখ্যাত তান্ত্রিক উদয়নারায়ণের প্রতিষ্ঠা করা ঠনঠনিয়া কালী এবং রঘু ডাকাতের প্রতিষ্ঠা করা কাশীপুরের কৃপাময়ী কালী মন্দির এবং চিত্তেশ্বর রায় অর্থাৎ, চিতু ডাকাতের চিৎপুরের চিত্তেশ্বরী কালী মন্দির, করুণাময়ী কালী মন্দির– এগুলি কলকাতার প্রাচীনতম পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম।
দেবী কালীর মোট আটটি রূপ থাকলেও, যেহেতু রামকৃষ্ণদেব কৃষ্ণকালীরূপে দেবীর আরাধনা করেছিলেন, তাই সারা বাংলায় এর ব্যাপক প্রসার আছে। কলকাতায় বড় কালী মন্দিরগুলির মধ্যে মা সতীর একান্ন পীঠের অন্যতম কালীঘাট। এখানে দেবীর চারটি আঙুল পড়েছিল এবং কালীপুজোর দিন দেবীর লক্ষ্মীরূপের আরাধনা করা হয়। অন্যদিকে, রানি রাসমণির প্রতিষ্ঠা করা ভবতারিণীর মন্দির অর্থাৎ দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির ছিল রামকৃষ্ণদেবের লীলাক্ষেত্র। এছাড়াও বিখ্যাত কবিয়াল অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির প্রতিষ্ঠা করা বউবাজারের কালী, বিখ্যাত তান্ত্রিক উদয়নারায়ণের প্রতিষ্ঠা করা ঠনঠনিয়া কালী এবং রঘু ডাকাতের প্রতিষ্ঠা করা কাশীপুরের কৃপাময়ী কালী মন্দির এবং চিত্তেশ্বর রায় অর্থাৎ, চিতু ডাকাতের চিৎপুরের চিত্তেশ্বরী কালী মন্দির, করুণাময়ী কালী মন্দির– এগুলি কলকাতার প্রাচীনতম পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম।
সাধক রামপ্রসাদ আর তাঁর শ্যামাসঙ্গীত বাংলার কালীপুজোর ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা। তান্ত্রিক ও ডাকাতদের পূজিত দেবীকে বাংলার ঘরে-ঘরে মা ও মেয়ে-রূপে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই শ্যামাসঙ্গীতগুলির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। রঘু ডাকাতের নরবলি দিতে গিয়ে রামপ্রসাদের জায়গায় মা কালীকে দেখা এবং তার জীবন ভক্তিপথে পরিবর্তিত হওয়া রামপ্রসাদের মহিমার অন্যতম কীর্তি। হিসাবের খাতায় শ্যামাসঙ্গীত লেখা রামপ্রসাদ নিজের গ্রামে ফিরে এসে পঞ্চমুণ্ডের আসনে দেবীর সাধনা করে দর্শন পান। তিনি মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র, নবাব সিরাজদৌল্লা-সহ সকলকে মুগ্ধ করেছিলেন বলে শোনা যায়। মা কালীকে গঙ্গায় বিসর্জন দিতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে গঙ্গায় তলিয়ে যাওয়া রামপ্রসাদের শ্যামাসংগীতগুলি আজও কালীপুজোর অন্যতম আকর্ষণ হিসাবে আপামর বাঙালিকে মুগ্ধ করে।
সাধক রামপ্রসাদ আর তাঁর শ্যামাসঙ্গীত বাংলার কালীপুজোর ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা। তান্ত্রিক ও ডাকাতদের পূজিত দেবীকে বাংলার ঘরে-ঘরে মা ও মেয়ে-রূপে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই শ্যামাসঙ্গীতগুলির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। রঘু ডাকাতের নরবলি দিতে গিয়ে রামপ্রসাদের জায়গায় মা কালীকে দেখা এবং তার জীবন ভক্তিপথে পরিবর্তিত হওয়া রামপ্রসাদের মহিমার অন্যতম কীর্তি। হিসাবের খাতায় শ্যামাসঙ্গীত লেখা রামপ্রসাদ নিজের গ্রামে ফিরে এসে পঞ্চমুণ্ডের আসনে দেবীর সাধনা করে দর্শন পান। তিনি মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র, নবাব সিরাজদৌল্লা-সহ সকলকে মুগ্ধ করেছিলেন বলে শোনা যায়। মা কালীকে গঙ্গায় বিসর্জন দিতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে গঙ্গায় তলিয়ে যাওয়া রামপ্রসাদের শ্যামাসংগীতগুলি আজও কালীপুজোর অন্যতম আকর্ষণ হিসাবে আপামর বাঙালিকে মুগ্ধ করে।
আমাদের জীবনে আমরা সবসময়ই মহিমান্বিত আরাধ্যদের আরাধনা করতে ভালবাসি। সবসময় মনে হয় তাঁদের আশীর্বাদ আমাদের জীবনে মঙ্গল নিয়ে আসবে। সাধক বামাখ্যাপা তারাপীঠের মা তারাকে নিয়ে আরাধনা করেছিলেন। তারাপীঠের মহাশ্মশানে কখনও বামাচরণ জ্বলন্ত চিতার কাছে বসে থাকতেন, কখনও বাতাসে কথা বলতেন, গ্রামের সাধারণ মানুষ মনে করত খ্যাপা আস্তে-আস্তে তার নাম বামাচরণ থেকে হয়ে যায় বামাখ্যাপা। প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে মায়ের পুজো করার জন্য তাঁকে তৎকালীন পুরোহিত সমাজের বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু মায়ের অপার মহিমা এবং বারবার তাঁর ডাকে আবির্ভূত হয়ে সেখানকার রানিকে নির্দেশ দিয়ে, তিনি বামাকে স্বাধীন করেছিলেন তাঁর পুজো করার জন্য। বামাখ্যাপা কখনও মায়ের প্রসাদ নিজে খেয়ে, কখনও আবার মায়ের মালা নিজে পরে আরাধনা করতেন এবং তাঁরই মহিমায় দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে তারাপীঠের কথা। আজও, মৃত্যুর ১০০ বছর পরেও, তারাপীঠে বছরে কোটি
কোটি মানুষের সমাগম হয় এবং এই তীর্থক্ষেত্রটি মহিমান্বিত হয়ে আছে সাধক বামাখ্যাপার সঙ্গে। যদি তুমি মনের মধ্যে অহংকারের কালো মেঘ পুষে রাখো, স্বয়ং ঈশ্বরও আলোর পথ দেখাতে পারবে না।
ওই সময়ই হুগলির কামারপুকুর থেকে কলকাতায় এসে পৌঁছন বিখ্যাত সাধক রামকৃষ্ণদেব। জাগতিক শিক্ষায় তঁার কোনও আগ্রহ না থাকলেও সাধন মার্গে তাঁর ছিল অপার ভক্তি। মাত্র ১৯ বছর বয়সে দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের পূজারি নিযুক্ত হয়ে তিনি দীক্ষিত হন। গদাধরের নাম বদলে হয়ে যায় সাধক রামকৃষ্ণ পরমহংস। প্রচলিত পথের পরিবর্তে তিনি তাঁর মতো করে দেবীর পুজো করতে থাকেন। দেবীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কথা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে এবং জীবদ্দশায় তিনি সাক্ষাৎ কিংবদন্তিতে পরিণত হন। অল্প দিনের মধ্যেই প্রচলিত ধর্মীয় পথ ছেড়ে তিনি সহজে মানুষের কাছে প্রচার করতে থাকেন দেবীর মাহাত্ম্য। স্ত্রী সারদা দেবীকে তিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞান দান করেন এবং জগদম্বারূপে পুজো করেন। সরল সাধারণভাবে ধর্মকে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাখ্যা করার জন্য তিনি ‘লোকগুরু’ হিসাবে বিখ্যাত হন। নাটকের জগৎ থেকে ধর্মীয় জগৎ এবং স্বামী বিবেকানন্দর মতো বিখ্যাত শিষ্যদের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক জগতে তিনি হিন্দুধর্মকে নতুন দিশা দেখান। ‘যত মত তত পথ’– মা কালীর সাধকের অন্যতম সহজ জীবনযাপনের উপাদান আজও আমাদের পথ দেখায়।