Festival and celebrations

5 hours ago

Durga Puja 2025: দেবীর আরাধনা থেকে অধিকারের দাবিতে—সোনাগাছির দুর্গাপুজো আজ এক আন্দোলনের প্রতীক!

Durga Puja 2025; Celebrations in Sonagachi
Durga Puja 2025; Celebrations in Sonagachi

 

দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: সোনাগাছি—নামের সঙ্গে বহুদিন ধরেই জড়িয়ে আছে কুসংস্কার, কটূ মন্তব্য আর আড়চোখে দেখা। নামটা উচ্চারিত হতেই অনেকের মুখ কুঁচকে যায়, কথার প্রসঙ্গ বদলে ফেলেন কেউ কেউ। অথচ বিদ্রূপই হল, বাংলার দুর্গোৎসবের সেই প্রতিমা তৈরি হয় সোনাগাছির মাটি দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা ছিলেন আরাধনার বাইরে, তাঁরাই যেন মায়ের শক্তির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যৌনকর্মীদের সন্তানরা একসময় দুর্গাপুজোর আলো-আনন্দ থেকে দূরে সরে থাকতেন, কিন্তু সেই দিন ঘুচেছে। আজ সোনাগাছি নিজেই হয়ে উঠেছে দুর্গোৎসবের কেন্দ্রবিন্দু। এ বছর তাঁদের পুজোর ত্রয়োদশ বর্ষ। তবে এই তেরো বছরের যাত্রা কেবল উৎসবের নয়, এটি সমান মর্যাদা ও অধিকারের দাবিতে অবিচল লড়াইয়ের ইতিহাসও।

শরৎ মানেই উমার বাপের বাড়ি ফেরার ঋতু। বাংলার আকাশে সাদা মেঘ ভেসে উঠলে প্রত্যেক বাঙালির মনেও শুরু হয় দেবী আগমনের প্রতীক্ষা। কিন্তু সোনাগাছির মেয়েদের জন্য সেই আনন্দ ছিল অধরাই। তেরো বছর আগেও তাঁদের মণ্ডপে গিয়ে মায়ের আরাধনা করার অধিকার ছিল না। দেবীপক্ষে নারীশক্তির এই অপমান তাঁরা মানতে পারেননি। তাই সিদ্ধান্ত নেন, নিজেদের এলাকাতেই গড়ে তুলবেন দুর্গাপুজো। কিন্তু তাতেও বাধা আসে। যাঁরা রাতের আঁধারে তাঁদের শরীর ব্যবহার করতেন, সেই তথাকথিত ‘ভদ্রবাবুরাই’ প্রশ্ন তোলেন—পতিতারা আবার দেবীর পুজো করবে নাকি? তবু টানা তিন বছর চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে পুজো চালান তাঁরা। যদিও পরে নানা চাপের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু হার মানেননি সোনাগাছির যৌনকর্মীরা। তাঁদের রক্তেই তো বয়ে চলে দুর্গার শক্তি। তাই লড়াইয়ের পথ বেছে নেন। শেষমেশ ২০১৭ সালে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে পান অনুমতি। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্রমে এই পুজোয় শামিল হয়েছেন শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, সামাজিক সংগঠন থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষও।

চতুর্থীর দিন সোনাগাছির দুর্গাপুজোর সূচনা। শাস্ত্রীয় নিয়মে শুরু হয় দেবীর বোধন। সপ্তমীয় ভোরে গঙ্গা থেকে জল আনা হয়, কলাবউ স্নান করিয়ে দেবীর ডান পাশে স্থাপন করা হয়। এদিন থেকেই দেবীর পূজা শুরু হয়ে অষ্টমীর সকালে পুষ্পাঞ্জলি। সোনাগাছির দুর্গামণ্ডপে তখন এক অনন্য দৃশ্য দেখা যায়। সন্ধিপুজো অনুষ্ঠিত হয় যথাযথ নিয়মে। যৌনকর্মীরা নিজেরাই ভোগ রান্না করেন। নবমী কাটিয়ে দশমীর বিকেল নাগাদ শুরু হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি, আনন্দমুখর মানুষের ঢল মিলে এক অনবদ্য মেলবন্ধন তৈরি করে।

You might also like!