দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: দুর্গাপুজোর চারদিনের উত্সবের পর বিজয়া দশমী বাঙালির কাছে বিদায়ের দিন, তাই মনখারাপও অনিবার্য। বিসর্জনের আগে সিঁদুর খেলা, মিষ্টিমুখ আর কানে কানে “আবার এসো মা” বলায় ভরে ওঠে আবেগঘন মুহূর্ত। এই সব রীতি-রেওয়াজের সঙ্গেই জড়িয়ে ছিল এক সময়ে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর প্রথা। এখনও কোথাও কোথাও সেই রীতি পালিত হলেও বিলুপ্তপ্রায় হওয়ায় নীলকণ্ঠ ধরা বা কেনা-বেচা দীর্ঘদিন ধরেই বেআইনি। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়— কেনই বা দশমীতে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর এই প্রথার সূচনা হয়েছিল?
নীলকণ্ঠ হলো শিবের আরেক নাম। সমুদ্র মন্থনের পর ওঠা কালকূট বিষের প্রভাবে আচ্ছন্ন হয়ে পড়া সৃষ্টিকে রক্ষা করতে সেই ভয়ানক বিষ নিজের কণ্ঠে ধারণ করেন মহাদেব। তখন বিষের জ্বালায় তাঁর গলা নীলবর্ণ ধারণ করে। সেই কারণে মহাদেবের আরেক নাম নীলকণ্ঠ। আবার নীলকণ্ঠ পাখির গায়ের রং যেহেতু নীল, তাই এই পাখিকে শিবের দোসর বলে মনে করা হয় হিন্দু ধর্মে। দশমীতে দুর্গা প্রতিমার ভাসানের আগে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর প্রথা চালু হওয়ার পেছনে এই বিশ্বাস কাজ করে যে নীলকণ্ঠ পাখি আগে কৈলাসে গিয়ে মহাদেবকে পার্বতীর আগমন বার্তা দেবে। নীলকণ্ঠ পাখিকে মহাদেবের দূত বলে মনে করা হয়।
রামায়ণ অনুসারে দশেরার দিন রাবণ বধের আগে নীলকণ্ঠ পাখির দর্শন পেয়েছিলেন রাম। তারপরই রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি জয়লাভ করেন। সেই কারণে দুর্গাপুজোর দশমী বা দশেরার দিন নীলকণ্ঠ পাখি দেখতে পাওয়া শুভ বলে অনেকে মনে করেন। বর্তমানে ডিজিটাল যুগে এদিন হোয়াটসঅ্যাপে নীলকণ্ঠ পাখির ছবি পাঠিয়েও পরস্পরকে দশমীর শুভেচ্ছা জানানোর প্রথা চালু হয়েছে। তবে এই পাখি এখন ক্রমশ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। উত্তর ভারতে অনেকে নীলকণ্ঠ পাখি দেখলে বলেন, ‘নীলকণ্ঠ তুম নীলে রহিয়ো, দুধ ভাত কা ভোজ করিয়ো, হামরি বাত রাম সে কহিয়ো।’
অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক এবং তেলেঙ্গানার স্টেট বার্ড বা রাজ্য পাখি হলো নীলকণ্ঠ বা ইন্ডিয়ান রোলার। অনেকের মতে আবার নীলকণ্ঠ পাখির দর্শন পেলে পাপমুক্তি হয় ও ইচ্ছাপূরণ ঘটে। কোনও কোনও শহরে খাঁচায় কাপড় ঢেকে পয়সার বিনিময়ে এই পাখি দর্শন করার প্রচলন আছে । নীলকণ্ঠ পাখির ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ান রোলার। এর আয়তন ২৫ সেন্টিমিটার থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার লেজ সমেত। ওজন ৭০ থেকে ১০০ গ্রাম হয়। পোকামাকড় খায় বলে নীলকণ্ঠ পাখিকে কৃষকের বন্ধু পাখিও বলা হয়ে থাকে। এই পাখি বড় বড় গাছের ডালে বাসা বাধে।