দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: তৃণমূল কংগ্রেসের ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে ২১ জুলাইয়ের সভা নিয়ে কড়া অবস্থান কলকাতা হাইকোর্টের। এই মামলায় রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনকে তীব্র কটাক্ষ করল আদালত ৷ বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের মন্তব্য, "মানুষ আর কত দিন সহ্য করবে ? 21 জুলাই সরকারি ছুটি ঘোষণা করে দিন ৷ তাতে অন্তত সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে ৷" বিচারপতি বলেন, "অন্য মিটিং বন্ধ করে দেব ৷ সামনের বছরের 21 জুলাইয়ের জন্য অন্য দু'টি বিকল্প জায়গার নাম জানান আপনারা ৷" রাজ্যের শাসক দলের পক্ষের আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, "এই মামলাটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ৷ 21 জুলাইয়ের সভা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই মামলা দায়ের করা হয়েছে ৷"
তখন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ পাল্টা প্রশ্ন করেন, "এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা কেন বলছেন ? এখানে তো কোথাও 21 জুলাইয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ করার কথা বলা হয়নি ৷ যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য আবেদন করা হয়েছে !" রাজ্যের আইনজীবী বলেন, "প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি এলেও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয় ৷ এই অনুষ্ঠান তিন দশক ধরে হয়ে আসছে ৷ এবার নতুন নয় ৷"
1993 সালের 21 জুলাই কংগ্রেস কর্মীরা সচিত্র ভোটার কার্ডের দাবিতে রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান করেছিলেন ৷ অভিযানে গুলি চলে ৷ সেই ঘটনায় 13 জন কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয় ৷ বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন ছিলেন যুব কংগ্রেসের নেত্রী ৷ তিনিই ওই অভিযানের আহ্বান করেছিলেন ৷ সেদিন তিনিও আহত হয়েছিলেন ৷ 13 জনের মৃত্যুকে স্মরণ করে প্রতিবছর ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে সভা করেন মমতা ৷
অন্যদিকে, এদিনের শুনানিতে একুশে জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশের ফলে যানজটের সমস্যা হবে কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য ৷ তিনি বলেন, "এটা নিয়ে মামলাকারীরা জনস্বার্থ মামলা করতে পারতেন ৷ এটা জনস্বার্থ মামলার বিষয় ৷ এখানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কেন মামলা করা হল ?" তারপরই বিচারপতি এই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে রাজ্যের আপত্তির বিষয়ে তাদের বক্তব্য আগামিকাল জানাতে নির্দেশ দেন ৷ আগামিকাল ফের এই মামলার শুনানি ৷
এদিনের শুনানিতে তৃণমূলের আইনজীবী আরও বলেন, "এটা শহিদ দিবসের অনুষ্ঠান ৷ 13 জন শহিদ হয়েছিলেন ৷" মামলাকারী অল ইন্ডিয়া ল'ইয়ার্স ইউনিয়নের তরফে আইনজীবী শামিম আহমেদ বলেন, "আমরা কোনও মিটিংয়ের বিপক্ষে নই ৷ কিন্তু মনে রাখতে হবে কেসি দাশ থেকে ভিক্টোরিয়া হাউজ পর্যন্ত 144 ধারা জারি থাকে ৷ গতকালও এই নিয়ে একটা নোটিফিকেশন বের করা হয়েছে ৷"
তৃণমূলের আইনজীবীর পালটা দাবি, "মামলা যারা করেছে তারা রাজনৈতিক সংগঠন ৷ তাদের জন্য 13 জনের মৃত্যু হয়েছিল ৷" তখন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, "আমি অন্য মামলাতেও মিটিং-মিছিল নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছিলাম ৷ প্রয়োজনে এই ক্ষেত্রেও রেস্ট্রিকশনের নির্দেশ দেব ৷ প্রতিটা জায়াগায় সব রাজনৈতিক দলের কিছু না কিছু অ্যাটাচমেন্ট থাকে !" আপাতত আগামিকাল বিচারপতি কী নির্দেশ দেন সেদিকে নজর সব পক্ষের ৷