দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক : বাংলা ভাষার প্রতি অবমাননা কিংবা বাঙালির প্রতি হেনস্থার ছবি যখন দেশের নানা প্রান্ত থেকে উঠে আসছে, তখন নীরব থাকছে না বাংলাও। এ বার সেই প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠছে উৎসব নিজেই। বাংলার সবচেয়ে বৃহৎ উৎসব দুর্গাপুজোকে ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সম্মান রক্ষার বার্তা ছড়িয়ে দিতে। উস্কানিমূলক মন্তব্য ও অপমানের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার মাধ্যম হয়ে উঠছে মণ্ডপ, প্রতিমা ও পুজো পাণ্ডালজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সৃষ্টিশীলতা।
শহরের দুই প্রাচীন দুর্গাপুজো কমিটি পাথুরিয়াঘাটা ৫–এর পল্লি এবং চালতাবাগান সর্বজনীন জানিয়ে দিল, এ বার তাদের থিমের মূল ভিত্তিই বাংলা ভাষা।
বর্ষার দিনে চপ–মুড়ি সহযোগে আড্ডা। বাঙালির কাছে এর চেয়ে তৃপ্তির আর কী–ই বা হতে পারে! তাই পাথুরিয়াঘাটা ৫–এর পল্লির উদ্যোক্তারা একেবারে ঘরোয়া অনুষ্ঠানে চপ–মুড়ি এবং চা নিয়ে আড্ডার আবহে ঘোষণা করলেন তাঁদের থিম ‘হরফ’।
কী ভাবে গত কয়েকশো বছরে বাংলা হরফের বিবর্তন হয়েছে, কী ভাবে একেবারে শুরুর যুগের চর্যাপদ ক্রমশ বিবর্তিত হয়ে আজকের বাংলা ভাষায় পরিণত হলো — সেটাই দেখানো হবে এখানকার দুর্গাপুজোর মণ্ডপে।
পুজোকমিটির প্রধান উদ্যোক্তা তথা কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলার ইলোরা সাহা সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানায় যে ‘আমরা পুজোর জন্য বিশেষ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছি। এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে— আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান। আমাদের পুজোর ভাষা বাংলা।’
তাঁর কথায়, ‘আমাদের আবেদন মাতৃভাষা বাংলাকেই সম্মান জানিয়ে সেই ভাষায় ভাব বিনিময় করা হোক।’ ইলোরা জানিয়েছেন, বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি এবং খাদ্যাভ্যাসের কোনও রকম সম্মানহানি সহ্য করা হবে না।
৮১ বছরের চালতাবাগান সর্বজনীনও বাঙালির অসম্মানের প্রতিবাদে ‘আমি বাংলায় বলছি’ থিমের ঘোষণা করেছে। কমিটির পক্ষ থেকে মৌসম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এখন বাঙালিরাই আর বাংলায় কথা বলতে চান না। ভিন রাজ্যের লোকজন এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। যতদিন না বাঙালি নিজের ভাষা, সংস্কৃতি ও জাত্যাভিমান উপলব্ধি করতে পারবে, ততদিন তাদের এই অসম্মান ভোগ করতে হবে। আমরা তাই মণ্ডপের মাধ্যমে এই বোধ জাগানোর চেষ্টা করব।’
কয়েক বছর আগে ইউনেস্কো কলকাতার দুর্গাপুজোকে ‘ইনট্যাঞ্জিবল হেরিটেজ’ তকমা দিয়েছে। কলকাতায় বসবাসকারী অবাঙালির সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু বাঙালিরা তাদের সবচেয়ে বড় উৎসবে অবাঙালিদের দূরে সরিয়ে রাখে না। তাই দুর্গাপুজো সব সময়েই সৌহার্দের বার্তা দেয়। এ বার সেই দুর্গাপুজোই হতে চলেছে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় প্রচারমাধ্যম।