দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: সাংগঠনিক রদবদলের পর থেকেই মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে উত্তেজনা চরমে। একের পর এক তৃণমূল নেতা ও পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি এক পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামীকে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ—যদিও তিনি কোনওমতে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন। চাঞ্চল্যকর বিষয়, অভিযোগ তৃণমূলেরই এক মন্ত্রীর, তাঁর ভাই ও অনুগামীদের বিরুদ্ধে। নিরাপত্তার দাবিতে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে রাস্তায় নামলেন আক্রান্ত তৃণমূল কর্মীরা। দলের বিরুদ্ধেই দলীয় কর্মীদের বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধে উত্তাল গোটা এলাকা।
অভিযোগ, ব্লকের সাংগঠনিক রদবদল হয়। তাতে পদ পেতেই মন্ত্রী অনুগামীরা এলাকায় তাণ্ডব শুরু করেন। রাতে জেলা পরিষদ সদস্য ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতাদের বাড়িতে দোকানে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ওই তৃণমূল নেতাদের ধরে ধরে খুনের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এর প্রেক্ষিতে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আক্রান্তরা। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবিতে রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ তৃণমূলের অপরপক্ষের। তাঁদের অভিযোগ, মন্ত্রীর ভাইয়ের নির্দেশেই এই হামলা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে গোটা বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী। হরিশ্চন্দ্রপুরের এই ঘটনা নিয়ে খোঁচা বিজেপির।
ক্রমশ অস্বস্তি বাড়ছে শাসক শিবিরে। ফের শিরোনামে রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তাজমুল হোসেনের বিধানসভা এলাকা হরিশ্চন্দ্রপুর। সাম্প্রতিক অতীতেই একাধিকবার মন্ত্রী তাজমুলের সঙ্গে এলাকার দাপুটে জেলা পরিষদ সদস্য বুলবুল খানের দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে। সংঘাতে জড়িয়েছেন দুই নেতার অনুগামীরাও। দুই দিন আগে ব্লকের রদবদল হয়েছে। যা নিয়েও ক্ষোভ ছিল দলের অন্দরে।হরিশ্চন্দ্রপুর ১ (এ) ব্লক তৃণমূলের সভাপতি পদ খুইয়েছেন বুলবুল ঘনিষ্ঠ জিয়াউর রহমান। জায়গা পেয়েছেন মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ মোশারফ হোসেন।আবার যুব তৃণমূলে সভাপতির পদ পেয়েছেন মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ বিজয় দাস। যাকে কোনদিনও দলের পতাকা হাতে দেখা যায়নি। এমনটাই অভিযোগ করে ছিল তৃণমূলের একাংশ। তারপরই মঙ্গলবার রাতে অশান্তি চরমে ওঠে।
বুধবার সকাল থেকেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি। ঘটনাস্থলে রয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ। ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকার মানুষ। ব্যাপক উত্তেজনা রয়েছে এলাকায়। তৃণমূল নেতা তথা হরিশ্চন্দ্রপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা স্বপন আলি বলেন, “আমাদের নেতার বাড়ি-গাড়ি ভেঙেছে, আক্রমণ করেছে। দোকান ভাঙচুর হয়েছে। দিনের আলোয় এখন অভিযুক্তরা ঘুরছে। পুলিশ নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। কিন্তু কেন? যতক্ষণ না গ্রেফতার হচ্ছে, আমরা অবরোধ করছি।” হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তাজমুল হোসেন শুধু বলেন, “আমি গোটা বিষয়টা খোঁজ নিচ্ছি।” গোটা বিষয়টিই এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। বিজেপির জেলা সভাপতি অজয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “মন্ত্রীর ভাই ক্ষমতা দেখাতে গিয়েই, এই গন্ডগোল। প্রকাশ্য সভায় বক্তব্য রেখে মানুষকে উস্কিয়ে একজনকে পিটিয়ে মারে। তার কেস চলছে। এখন এইসব করেছে। পঞ্চায়েত সমিতির জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতেই হামলা করে। ওরা নিজেদের মধ্যেই মারামারি করে শেষ হয়ে যাবে।”