দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক :১৫ অগস্ট আসতে আর বেশি দেরি নেই। এ বছর জাতীয় দিবসের সঙ্গে শনিবার ও রবিবার মিলিয়ে মিলছে টানা তিন দিনের ছুটি। যদি আরও একটি দিন যোগ করা যায়, তবে দারুণ একটি ভ্রমণের সুযোগ তৈরি হবে। গন্তব্য হতে পারে কৈমুর— যেখানে সবুজে মোড়া পাহাড়, ঝরে পড়া জলপ্রপাত, পাহাড়ঘেরা জলাধার, ঘন অরণ্য আর সমৃদ্ধ ইতিহাস— এক সফরেই মিলবে প্রকৃতি ও ঐতিহ্যের এক অপূর্ব মেলবন্ধন।
বিন্ধ্য পর্বতের পূর্ব অংশ কৈমুর রেঞ্জ। পড়শি রাজ্য বিহারেই তার অবস্থান। বর্ষার জলে সিক্ত পাহাড় এই সময় হয়ে ওঠে ঘন সবুজ। টানা বৃষ্টিতে শুকিয়ে যাওয়া ঝর্না, জলাধার এখন টইটম্বুর। কাইমুরের রূপ পুরোপুরি বদলে দেয় বর্ষা। সেই সজীবতার স্পর্শ পেতে গেলে যেতে হবে অক্টোবরের আগেই।
যাবেন তো বটে, ঘুরবেন কী ভাবে? শুরুটা করতে পারেন সাসারাম দিয়েও। এখানে রয়েছে সুলতান শের শাহ সুরির সমাধি। কৃত্রিম জলাশয়ের উপর অষ্টভূজাকৃতি সৌধ তৈরি হয়েছে বেলেপাথর দিয়ে। জলের উপর দিয়ে মাঝ বরাবর পর্যন্ত চলে গিয়েছে পথ। তার পর ত্রিস্তরীয় সৌধ। জায়গাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যতটা মনোরম, স্থাপত্যও নজরকাড়া।
সাসারাম থেকে সড়কপথে চলুন কৈমুর। এখানকার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে মুন্ডেশ্বরী মন্দির। অরণ্যে ঢাকা পনওয়াড়া পাহাড়ের উপর খুব পুরনো মন্দির মুন্ডেশরী মাতার। উচ্চতা ৬০০ ফুট। মনে করা হয়, মন্দিরটি গুপ্ত যুগের। দেওয়ালে খোদিত কারুকাজ চোখে পড়ার মতো। অষ্টভূজাকৃতি পাথরের মন্দিরটি। স্থানীয়দের কাছে এই স্থানের মাহাত্ম্য যথেষ্ট। ভিতরে রয়েছে দেবীমূর্তি।
মন্দির থেকে ঝর্না, জলাধার ঘিরে রেখেছে কৈমুরের আনাচ-কানাচ। যে দিকেই চোখ যায়, মনে হয় পটে আঁকা ছবি। বাদল মেঘ, ঘন সবুজ পাহাড়ের হাতছানি এড়ানো যেমন কঠিন, তেমনই সাসারাম, কৈমুর, রোহতাসের প্রতিটি স্থানই যেন সৌন্দর্যে একে অপরকে টেক্কা দেয়।
কৈমুর অভয়ারণ্যের মধ্যেই রয়েছে ঝর্না। সাসারাম থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে তার অবস্থান। কৈমুর পাহাড়ের মাথায় রয়েছে মনঝর কুণ্ড এবং ধুঁয়াকুণ্ড জলপ্রপাত। বর্ষাই এই রূপ উপভোগের জন্য আদর্শ। একটি জলপ্রপাতই এক অংশে সীতা কুণ্ড, মাঝে মনঝর কুণ্ড এবং সব শেষে ধুঁয়াকুণ্ড নামে পরিচিত। স্থানীয়দের কাছে এই স্থান খুবই জনপ্রিয়। প্রবল স্রোত জলপ্রপাতের। তবে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক ধুঁয়াকুণ্ড। পাহাড়ের উপর থেকে জলস্রোত ঝাঁপিয়ে পড়ছে খাদে। জলকণা ছিটকে বাষ্পীভূত হয়ে যাচ্ছে চারপাশে।
ধুঁয়াকুণ্ড দেখে যদি মনে হয়, কী দেখলাম, তা হলে তুতলাভবানীর ঝর্নাও কিন্তু টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এটি পড়ে রোহতাস জেলায়। তুতলাভবানী ইকো পর্যটকেন্দ্রের প্রবেশপথ থেকে বাকি রাস্তা যেতে হয় অটো বা টোটোতে। ঘন সবুজ পাহাড়ি উপত্যকা চার দিকে। পাহাড়ে তুতলাভবানীর মন্দির। যাওয়ার জন্য রয়েছে ঝুলন্ত সেতু। এখান থেকে প্রত্যক্ষ করা যায় ঝর্নার বর্ষার রূপ। প্রবল জলের তোড়। সেই শব্দ শোনা যায় দূর থেকেই। সামনে ঝর্না, ঠিক তার পাশ দিয়েই মন্দিরের পথ গিয়েছে। দারুণ রোমাঞ্চকর এই জায়গা। তবে শীতে জল না থাকলে কিন্তু তা এত মনোরম মনে হবে না।
জলপ্রপাত দেখার এখানেই শেষ নয়। নানা প্রান্তে প্রকৃতি সৃষ্টি করেছে একাধিক জলপ্রপাতের। কোনওটির নাম লোকে জানেন, কোনওটির জানেন না। রোহতাস জেলার এমনই একটি স্থান কসিস জলপ্রপাত। অরণ্যপথে বেশ কিছুটা পাড়ি দিতে হবে সে জন্য।
ইন্দ্রপুরা জলাধারের সৌন্দর্যও কম নয়। সাইটসিইং-এ এটিও একটি দ্রষ্টব্য। শোন নদীর উপর বাঁধ দিয়ে সেটি তৈরি হয়েছে। এটি অবশ্য পড়ে রোহতাস জেলায়। বৃষ্টি বেশি হলে লকগেট দিয়ে প্রবল শব্দে জল বেরোতে থাকে। কখনও আবার ভাসিয়ে দেয় আশপাশ।
সাসারাম থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে রোহতাসে রয়েছে পাহাড় ঘেরা করমচাট জলাধার। দুর্গাবতী নদীতে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে জলাধারটি। দেখলে মনে হবে যেন কোনও শুটিং স্পট।
রোমাঞ্চের শখ থাকলে ঘন অরণ্যের মধ্যে ঘুরে নিতে পারেন শেরগড় ফোর্ট। তবে বর্ষায় যেতে হলে একটু সাধবান। সাপের ভয় থাকতেই পারে। দুর্গে ওঠার জন্য রয়েছে সিঁড়ি। পরিত্যক্ত দুর্গ, ভাঙাচোরা মহল, আর নির্জনতার অদ্ভুত এক আকর্ষণ আছে। আছে গা ছমছমে ব্যাপার। কৈমুর জেলার আর এক দর্শনীয় স্থান তেলহার কুণ্ড। দুর্গাবতী নদীর অদূরেই সেই স্থান। অরণ্য ঘেরা জায়গাটি স্থানীয়দের কাছে জনপ্রিয় পিকনিক স্পট। নাম ‘কুণ্ড’ হলেও এটি কিন্তু সুউচ্চ জলপ্রপাত। বর্ষার রূপও উপভোগ করার মতোই।
এত জলপ্রপাত বা জলাধারেও এখানকার দ্রষ্টব্য শেষ হয় না। যদি দিন তিনেক সাসারাম বা রোহতাসগড়ে থেকে ঘুরতে পারেন, তা হলে তালিকায় যোগ করুন কর্কটগড়। পাহাড়ের সৌন্দর্য রয়েছেই। পথে পড়বে জগদহওয়া জলাধার। কর্কটগড়ে রয়েছে সযত্নে সাজানো বিশাল বাগিচা। তারই এক স্থান থেকে দ্রষ্টব্য কর্কটগড় জলপ্রপাত।
সাসারাম থেকে কর্কটগড়ের দূরত্ব সড়কপথে প্রায় ৮০ কিলোমিটার। কাছের রেলস্টেশন ভাবুয়া রোড।
কী ভাবে যাবেন?
হাওড়া স্টেশন থেকে একাধিক ট্রেন রয়েছে সাসারাম যাওয়ার। হাওড়া থেকে দুন এক্সপ্রেস, পূর্বা, নেতাজি এক্সপ্রেস, মুম্বই মেল-সহ একাধিক ট্রেন রয়েছে রাতে। সকালেই সেগুলি সাসারাম পৌঁছয়। কলকাতা-জন্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেস সাসারামের উপর দিয়ে যায়। ফেরার সময় সাসারাম হয়ে ফিরতে পারেন। যদি কর্কটগড় সফর তালিকায় থাকে, তা হলে ভাবুয়া রোড থেকে ফেরার ট্রেন ধরুন।
কোথায় থাকবেন?
সাসরাম, রোহতাসে একাধিক হোটেল রয়েছে। বিশেষত সাসারামে থাকার জায়গা নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না।