Travel

2 days ago

Travel Ideas :ঝরনা-কুয়াশার হাতছানি, বর্ষায় সবুজে মোড়া পরেশনাথে ডাকে রোমাঞ্চ!

Pareshnath trek in monsoon
Pareshnath trek in monsoon

 

দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক :গভীর ভাবে প্রকৃতিকে জানার একমাত্র পথ—চলা। শুধু পায়ে হেঁটেই পাহাড়ের বাঁক, গাছপালার শোভা, আর মেঘ-কুয়াশার নিঃশব্দ আলিঙ্গনকে অনুভব করা যায়—এমনটাই মনে করেন অভিজ্ঞ ট্রেকাররা।

তাঁদের মতে, প্রকৃতির নিবিড় সৌন্দর্য শুধু চোখে দেখা নয়, সেটা অনুভব করতে হয় মন দিয়ে, ধীরে ধীরে পথ হাঁটার মাধ্যমে। আর সেই পথেই ধরা দেয় পাহাড়ের ভাষা, গাছের স্পর্শ, বাতাসের গন্ধ।

আপনারও কি মনে হয়, প্রকৃতিকে ভালোবাসার আসল উপায় লুকিয়ে আছে সেই হাঁটার পথেই? তাহলে হয়তো আপনিও সেই প্রকৃতিপ্রেমী তালিকারই একজন।

তা হলে এই বছরের বর্ষা উপভোগ করতে পারেন একটু অন্য ভাবে। উত্তরাখণ্ড বা হিমাচল নয়, রাতের ট্রেন ধরলে ভোরেই পৌঁছনো যায় এখানে। তার পর হাঁটতেও পারেন, না হলে বাইকের বন্দোবস্ত রয়েছে। আছে ডুলিও। ঘুরে নিন ঝাড়খণ্ডের পরেশনাথ পাহাড়।

জৈনদের কাছে এ এক পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। পর্যটনপ্রেমীদের কাছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের ঠিকানা। তবে যিনি যে কারণেই যান না কেন, এক যাত্রায় রথ দেখা কলা বেচা দুই-ই হবে। মন প্রশান্তিতে ভরবে।


ঝাড়খণ্ডের গিরিডি জেলায় অবস্থিত পার্শ্বনাথ বা পরেশনাথ পাহাড়। তারই চূড়ায় জৈন তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের স্মরণে তৈরি হয়েছে মন্দির। জৈন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই স্থানেই পার্শ্বনাথ মোক্ষলাভ করেছিলেন। পাহাড়ের আনাচকানাচে অন্য জৈন তীর্থঙ্করদের নামাঙ্কিত ছোট ছোট মন্দির বা টোঙ্কও রয়েছে। আছে পাহাড়ি ঝোরাও।


যাত্রা শুরু হয় মধুবন নামে একটি স্থান থেকে। পরেশনাথ রেল স্টেশন থেকে শেয়ার গাড়িতে মধুবন আধ ঘণ্টার পথ। সেখানেই টুকিটাকি খাওয়ার বন্দোবস্ত। পাহাড়ে চড়ার জন্য লাঠি, বর্ষায় ব্যবহারের বর্ষাতি কিনতে পাওয়া যায়। এখান থেকেই পেয়ে যাবেন বাইক। বাইক আরোহীরা অর্থমূল্যের বিনিময়ে পর্যটকদের পাহাড়ে চড়তে সাহায্য করেন। তবে পার্শ্বনাথ মন্দিরে পৌঁছনোর শেষ ধাপে রয়েছে অনেক সিঁড়ি। সেগুলি কিন্তু হেঁটেই উঠতে হয়।

মধুবন থেকে পার্শ্বনাথ মন্দির প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ। তবে পাহাড় জুড়ে ছড়িয়ে থাকা জৈন তীর্থঙ্করদের টোঙ্ক বা মন্দিরগুলি ঘুরতে গেলে দূরত্ব বেড়ে যায় বেশ কিছুটা। এত দিন এই পথ লোকে হেঁটেই উঠতেন। আজও ওঠেন। শীতে পরেশনাথ যাত্রা সব সময়েই জনপ্রিয়। তবে বর্ষার রূপের আকর্ষণ মোটেই কম নয়। এই বৃষ্টি, পর ক্ষণে রোদ। কখনও আবার ঘন মেঘের আস্তরণ ঢেকে দেয় গোটা পাহাড়টাই। মেঘের চাদর সরলে রবিকরিণে উদ্ভাসিত হয় পাহাড়ের কিছু অংশ। শীতের তাপমাত্রা ঝকঝকে রোদে হাঁটার জন্য ভাল হলেও, বর্ষা তাতে যোগ করে অন্য মাত্রা। মেঘলা দিনে রূপ এক রকম, ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামার পর আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে বৃষ্টিধৌত পাহাড়ের শ্যামলিমা দেখার মতোই বটেই।

পাহাড়ে চড়া শুরু করার কিছু ক্ষণের মধ্যেই চোখে পড়বে মারাংবুরুর মন্দির। তিনি আদিবাসীদের দেবতা। তাঁর নামেই এই পাহাড়কে কেউ কেউ মারাংবুরু পাহাড়ও বলেন। জৈন ধর্মালম্বীরা বিশ্বাস করেন, ২০ জন জৈন তীর্থঙ্কর এই পাহাড় থেকে মোক্ষলাভ করেছিলেন। সে কারণে এই স্থান অতি পবিত্র।

পাহাড়ি পথ সুন্দর করে বাঁধানো। স্থানে স্থানে চড়াই। রয়েছে সিঁড়ি। কোথাও আবার রাস্তা সংক্ষিপ্ত করার জন্য পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ওঠার ব্যবস্থাও আছে। তবে বর্ষায় পরেশনাথ গেলে, ঝোপঝাড় এড়িয়ে চলাই ভাল। কারণ, সাপখোপের ভয় তো আছেই, রয়েছে পিচ্ছিল পথে পা হড়কে যাওয়ার ঝুঁকিও।

তবে বাঁধানো চত্বরে সাবধানে পা ফললে, সে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তিরচিহ্ন দিয়ে দিকনির্দেশ করা রয়েছে প্রতি পদক্ষেপে। জৈন তীর্থঙ্করদের টোঙ্ক বা মন্দিরগুলি কোথায় রয়েছে, সেগুলি বুঝে নিতেও সে কারণে কোনও অসুবিধা হয় না। যাত্রাপথে মাঝেমধ্যেই মিলবে ছোট গুমটি। সেখানেই চা, খাবার পাওয়া যায়। কোথাও কোথাও বিশ্রামের জন্য খাটিয়া ভাড়া নিতে পারেন। বাহুল্যবর্জিত হলেও, বন্দোবস্ত ভালই।

হেঁটে উঠতে হলে বিশ্রাম নিয়ে, টুকিটাকি শুকনো খাবার খেতে খেতে ধীরে চলাই ভাল। পথশ্রমে খুব বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়লে ডুলি ভাড়া করা যায়। তা ছাড়া বাইকে গেলে কষ্ট অনেকটাই কমে যায়। গোটা যাত্রাপথে যে যে জায়গায় সিঁড়ি আছে, সেই স্থানগুলি বাইকে গেলেও হেঁটেই উঠতে হয়।

হেঁটেই যান বা বাইকে, অরণ্যপথের শোভা মুগ্ধ করবেই। পাহাড়ের যত উপরে ওঠা যায়, ততই কমতে থাকে তাপমাত্রার পারদ।বাড়তে থাকে সৌন্দর্য। মেঘ-কুয়াশার বাড়াবাড়ি না থাকলে পাথরে বাঁধানো মন্দির চত্বর থেকে উপভোগ করা যায় আশপাশের সৌন্দর্য। দেখা যায় দূর-দূরান্ত পর্যন্ত। এখানে বাড়িঘর নেই। তাই যত দূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর বনানী। পাহাড়ে ওঠা একটু কষ্টকর হলেও, নামা অপেক্ষাকৃত সহজ। হেঁটে ওঠা-নামা করলে ঘণ্টা ১০ সময় হাতে রাখুন। তবে ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকলে অনেক কম সময়েই ঘোরা হয়ে যেতে পারে।

কোথায় থাকবেন?

মধুবনে ধর্মশালা এবং ছোটখাটো কয়েকটি হোটেল পেয়ে যাবেন থাকার জন্য। ভাড়া ৭০০-১২০০-এর মধ্যে।

আর কী দেখবেন?

মধুবনে বেশ কয়েকটি জৈন মন্দির আছে। সেগুলিও ঘুরে দেখতে পারেন। তবে হাতে দিন দুই বাড়তি সময় থাকলে ধানবাদ থেকেও ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে পারেন। ধানবাদে বথিন্ডা জলপ্রপাত এবং তোপচাঁচি জলাধার দেখে নিতে পারেন। গিরিডিতে রয়েছে সহজপাঠে পড়া উশ্রী ঝর্না। যা এই বর্ষায় উচ্ছ্বল। দেখে নিতে পারেন খান্ডোলি জলাধারও।

You might also like!