জয়নগর : দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করের খুনের তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, ধৃত ব্যক্তিকে জেরায় অনেক নতুন নতুন তথ্য উঠে এসেছে। এই খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার শাহরুল শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শাহরুলকে গ্রেফতারের পর জেরা শুরু করে পুলিশ। শাহরুল আদতে ডায়মন্ড হারবারের নেতড়ার বাসিন্দা। পুলিশ সূত্রে খবর, বছর তেইশের শাহরুল চুরি-ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত। পুলিশের খাতায় আগেও তাঁর নাম উঠেছে। পাশাপাশি, দর্জির কাজও করতেন তিনি।
পুলিশের দাবি, সইফুদ্দিন কখন, কোথায় যান, তাঁর গতিবিধির উপর নজর রাখতে তৃণমূল নেতার বাড়ির পাশেই একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন অভিযুক্ত শাহরুল। জয়নগরের বামনগাছিতে সইফুদ্দিনের প্রাসাদোপম একটি বাড়ি আছে। তার একটু দূরেই কয়েক দিন ধরে থাকছিলেন তিনি।
পুলিশি জেরায় শাহরুল জানিয়েছেন, তিনি একটি ‘নতুন কাজের বরাত’ পান কিছু দিন আগে। তাঁকে বলা হয়, একটি ‘চুরির কাজ’ আছে। তাই একটি বাড়িতে নজর রাখতে হবে। রাজি হয়ে যান ওই যুবক। তার পর তিনি চলে আসেন বামনগাছি এলাকায়।
সোমবার তৃণমূল নেতাকে গুলি করে খুনের সময় তিনিও ছিলেন। পুলিশের দাবি, শাহরুলই খবর দিতেন যে, কখন নমাজ পড়তে মসজিদে যান সইফুদ্দিন। তাঁর কথা মতোই ‘অপারেশন’-এর সময় ঠিক করে নেন। তবে এই সঙ্গে তাঁর দাবি, এই খুন তিনি করেননি। খুনের কথাও তাঁর আগাম জানা ছিল না। খুনের সঙ্গে জড়িত দুজনের নামও তিনি জানিয়েছেন। ওই দুজনের একজন, সাহাবুদ্দিনকে সোমবারই পিটিয়ে মেরে ফেলে জনতা।
শাহরুল জানায়, ভোরবেলা নমাজ পড়তে যান সইফুদ্দিন। আর তার পর ওই সময়টাকেই বেছে নেয় দুষ্কৃতীরা। প্রকাশ্যে এসেছে খুনের আগের মুহূর্তে সিসিটিভি ফুটেজও। তাতে দেখা যাচ্ছে, ভোরবেলা সইফউদ্দিন নমাজ পড়তে যাওয়ার সময় তাঁকে অনুসরণ করে কয়েকজন। এর পর দুটি বাইকে চড়ে তারা পিছু ধাওয়া করে তৃণমূল নেতাকে খুন করে।
‘চুরি’র জন্য নজরদারির কাজে শাহরুলকে এক লক্ষ টাকা বরাত দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া আরও তথ্য মিলেছে। ধৃত শাহরুল শেখ ও সোমবার অভিযুক্ত সন্দেহে যাকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, সেই সাহাবুদ্দিন লস্কর পরস্পরের পরিচিত। সাহাবুদ্দিনের বাড়ি জয়নগর থানা এলাকার গোদাবর অঞ্চলে। সাহাবুদ্দিন মূলত সাইকেল নিয়ে ডায়মন্ড হারবার এলাকায় যাতায়াত করত। শাহরুল ও সাহাবুদ্দিনের যোগাযোগ ছিল।
এদিকে, সইফউদ্দিন খুনের পর গণপিটুনিতে সাহাবুদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় ফুঁসছে তার পরিবার। ঘটনার বিচার চাইছেন স্ত্রী জরিনা বিবি। মৃতের মেয়ে রুবিয়া জানান, ঘটনাটি জানার পর তাঁরা বাবার ফোনে ফোন করেছিলেন, কিন্তু কোনও সাড়া পাননি। তাঁর বাবা এ সবের সঙ্গে যুক্ত নন বলেই দাবি। প্রথম থেকে তাঁর বাবা তৃণমূল করত, বলছেন মেয়ে। আইন আদালত থাকা সত্বেও কেন তার বাবাকে এইভাবে পিটিয়ে মারা হয়েছে? সেই প্রশ্ন তুলছে পরিবার।