দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ ভাঙড়ে একসময় বাঘে-গোরুতে একঘাটে জল খেত আরাবুল ইসলামের নামে। নানা বিতর্কের মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিক উত্থান ঘটিয়েছেন তিনি। ভাঙড় গত কয়েক বছরে হয়ে উঠেছে অশান্তি, বোমাবাজি, হানাহানির স্বর্গরাজ্য। যতবারই আলোচনার শীর্ষে উঠেছে ভাঙড়, ততবারই সমোচ্চারিত হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের এই প্রাক্তন বিধায়কের নাম।
কাট টু ২০০৬। রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাব তখনই গুটিকয়েক জেলা কেন্দ্রীক। ক্ষমতার পালাবদল হতে তখন ঢের দেরি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বরাবরই তৃণমূল কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হলেও সিপিএমের সংগঠনকে ছাপিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সারা রাজ্য থেকে তৃণমূলের মাত্র ৩০ জন বিধায়ক জিততে পারেন। সেই তালিকায় ছিল এই আরাবুল ইসলামের নাম।
প্রভাব বিস্তার শুরু তখন থেকেই। ভাঙড়ে একচ্ছত্র আধিপত্য আনার চেষ্টায় নেমে পড়েন তৎকালীন তৃণমূলের 'তরুণ' নেতা। তৃণমূলের আরেক প্রভাবশালী বিধায়ক মদন মিত্র আরাবুলকে 'তাজা নেতা' বলে সম্বোধন করতেন। সিপিএমের চোখে চোখ রেখে উত্থান হতে থাকে এই নেতার। উত্থান হতে থাকে নানা বিতর্কিত বিষয়ও। জমি দখল, তোলাবাজি, দাদাগিরিতে হাত পাকাতে শুরু করে ভাঙড়ের এই তৃণমূল নেতা।
উত্থান এতটাই হয়ে গিয়েছিল যে দলকেও ভাবতে হয়েছে তাঁকে নিয়ে। তবে ২০১১ সালে গোটা রাজ্যে পরিবর্তনের ঝড় বইলেও ভাঙড়ে বাদল জামাদারের কাছে পরাজিত হন আরাবুল ইসলাম। দলবিরোধী কাজের জেরে ২০১৫ সালে তাঁকে ছয় বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। সাসপেন্ড হয়ে যাওয়ার কারণে কিছুটা একঘরে হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
আরাবুলের গ্রেফতারির ঘটনাও নতুন নয়। এর আগেও ২০১৫ সালে একটি সরকারি সংস্থা কাছে তোলা চাওয়া, চাহিদা অনুযায়ী টাকা না-পেয়ে ওই সংস্থার কর্মীদের মারধর এবং বোমাবাজির অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে হাফিজুল মোল্লা নামে এক নেতার খুনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। জলাজমির মধ্যে লুকিয়ে থাকলেও তাঁকে ফের গ্রেফতার করে পুলিশ।আরাবুল ছাড়াও তাঁর ছেলে হাকিবুল ও ভাই আজিজুর-সহ ১৩ জনের মামলা দায়ের হয়। পরপর গ্রেফতারির পর থেকেই তাঁর প্রভাব অনেকটাই ফিকে হতে শুরু করে দলে।
২০১৫ সালে তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হলেও ২০১৬ সালে সাসপেনশন তুলে নেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেন আরাবুল। যদিও তাঁকে আর বিধায়কের টিকিট দেওয়া হয়নি। সিপিএম নেতা রেজ্জাক মোল্লার সঙ্গে তাঁর চিরকালীন দ্বন্দ্ব থাকলেও সেই রেজ্জাক মোল্লাকে পরে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটেও ফের স্বমহিমায় খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন আরাবুল। গোষ্ঠী দ্বন্দের পাশাপশি, ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস, জমি দখল, ISF কর্মী খুন, তোলাবাজি সহ একগুচ্ছ অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সেই কারণে ফের জেল যাত্রা ভাঙড়ের সেই তাজা নেতার।