হুগলি, ২০ সেপ্টেম্বর : শোনা যায়, ভাণ্ডারহাটির চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজোর বলি প্রথা বন্ধের জন্য শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু শিষ্য পাঠিয়েছিলেন। তাই আজো শ্রীচৈতন্যদেবকে সম্মান জানিয়ে বলির পর চৌধুরী পরিবার নাম সংকীর্তনে মেতে ওঠে।
ধনেখালি থানা এলাকার ভাণ্ডারহাটি চৌধুরী বংশের দুর্গাপুজোর বয়স ৭৫। বছরের বেশি বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস। ধরণীধর চৌধুরী এই ভাণ্ডারহাটি চৌধুরী পরিবারের সূচনা করেন। আগে চট্টোপাধ্যায় পদবি থাকলেও পরে চৌধুরী উপাধি মেলে। অতুলচন্দ্র চৌধুরীর আমলে এই পরিবারের সমৃদ্ধি ও পরিচিতি বাড়ে। এই পরিবারের দুর্গাপ্রতিমা অভয়া মূর্তি। প্রতিমার এখানে ১০ হাত নয়, ২টি হাত। এক হাতে পদ্ম, অন্য হাত আশীর্বাদের ভূমিকায়।
৩৬৫ দিন রাধাগোবিন্দ মন্দিরে ভোগ হয়। মহালয়া থেকে চণ্ডীপাঠ শুরু হয়। বাজার থেকে কেনা ফুলে দেবীর পুজো হয় না। আশপাসের বাগান থেকে ফুল আসে। পুজোর ৪ দিন মাইক বাজে না। শুধু ঢাকের শব্দে মন্দির প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়। তবে এখানে দশমী নয়, নবমীতে সিঁদুর খেলা হয়। বলির সময় আগে তোপ দাগা হত। ৭০-এর দশক থেকে তা বন্ধ হয়ে যায়। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত দেবীকে দু ভাগে ভোগ দেওয়া হয়।
চৌধুরী পরিবারের সদস্য অমরনাথ চৌধুরী বলেন, '৭৫০ বছরের বেশি বয়স এই পুজোর। পুজো শুরুর ইতিহাস সম্পর্কে আমরা সামান্যই কিছু জানি। পুজো যখন শুরু হয়েছিল। তখন ঘড়ির আবিষ্কার হয়নি। তখন থেকেই জলঘড়ির সময় দেখে পুজো হত। এখনো জলঘড়ি ব্যবহার করা হয়। একবার পুজোয় বলির সময় পরিবারের এক সদস্য নিখোঁজ হয়ে যান। এরপর থেকেই দেবীর অভয়ামূর্তি পুজো হয়। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এই পরিবারের দুর্গাপুজোয় বলি প্রথা বন্ধের জন্য শিষ্য পাঠিয়েছিলেন। তবে পরিবারের অকল্যাণের কথা ভেবে বলি প্রথা বন্ধ না হলেও তাঁকে সম্মান জানিয়ে বলির পরে নাম সংকীর্তন করা হয়। বিসর্জনের সময় কাঁধে করে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয়। এখনও বিসর্জনের সময় হ্যাজাক ব্যবহার হয়।