কলকাতা, ২০ সেপ্টেম্বর : সর্বজনীন পুজোর উল্লাসে পাড়ায় পাড়ায় বসছে পেল্লাই হোর্ডিং। শুরু হয়েছে গাছের ডালপালা কাটার পালা। প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন পরিবেশবিদরা।
পরিবেশবিদ সমীর বোসের কথায়, “সারা শহরের একই চিত্র, বারান্দা বা জানলার সামনে দাঁড়ালে অর্ধেক মাস জুড়ে আর আকাশ দেখা যাবেনা। পাওয়া যাবেনা আর বাতাস, শ্বাসবায়ুও অপ্রতুল হয়ে আসবে কয়েক লক্ষ শহরবাসীর জন্য। অশক্ত মানুষের দিনযাপনের শেষ আশ্রয় তাদের এক চিলতে আকাশ আর একটু খোলামেলা আবাস আজ চলে যাচ্ছে তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। কারণ হল পুজোয় চাই বিশাল বিশাল অট্টালিকার মাপের হোর্ডিং। আপনি চান বা না চান আপনার বাড়ির সামনের গাছটির হাত-পা কাটা সারা হয়ে গিয়েছে তাকে জ্যামিতিক শাসনে বেঁধে ফেলার জন্য। অবাধ্য শেকড়ের বাড়াবাড়ি কোদালের ঘায়ে জব্দ। শহরের রাস্তার ধার দিয়ে সারিসারি বাঁশ, মানুষের ওষ্ঠাগত প্রাণের ছবি তুলে ধরছে। এর থেকে নিস্তার পাবে কি করে মানুষ?“
পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষের মতে, “উৎসবের এই দিনগুলিতে যানবাহনের সংখ্যা অতিমাত্রায় বাড়ে আর তার থেকে নির্গত দূষণের অধিকাংশই এই হোর্ডিংএর ফাঁকফোকরে আটকা পড়ে। এই বিষাক্ত ধোঁয়া আর ধূলিকণা অবরুদ্ধ বাড়িগুলোকে গ্রাস করে। রাস্তায় আনন্দে উন্মত্ত জনস্রোত আর হোর্ডিংএর আড়ালে অনেকটা গ্যাসচেম্বারের মত বাড়িগুলিতে ছটফটিয়ে মরে শহরবাসী।
একেই শহরের গড় বায়ুপ্রবাহের মাত্রা ঘন্টায় ১৫ কিমি এরও নীচে যেটা সাধ্যমতো বায়ুদূষণের মাত্রা কিছুটা হলেও কমায়,সেটুকুও থাকবেনা এই উৎসবের সারণীতে। এরপরেও এই প্রায় ঘাড়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়া হোর্ডিংগুলোর জন্য থাকবে অতি আলোকের রোশনাই।ঘর দুয়ার বারান্দার উত্তাপ বৃদ্ধি পাবে। বেঁচে থাকার ন্যুনতম ব্যবস্থা করে নিতে হবে গৃহস্থকে।“
সমীরবাবুর প্রশ্ন, “আমার জিজ্ঞাসা কেন এমন হবে? নগর শাসক বিজ্ঞাপন থেকে অর্থ উপার্জন করবে মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে দিয়ে? হোর্ডিং এর বিজ্ঞাপন নিয়ে আদালতের এত নির্দেশিকাগুলির কি কোনও ভূমিকা নেই এতে? কোথায় আর সংবিধানের সেই 'রাইট টু লিভ' বা 'সুস্থভাবে বাঁচার অধিকার' এর অক্ষরগুলো উঁকি মারছে? সরাসরি অসাংবিধানিক এই ব্যবস্থার উদ্যোক্তাদের কি আর এখন খুঁজে পাওয়া যাবে? তারা কারা?“