কলকাতা, ২৭ সেপ্টেম্বর : কুমোরটুলির এখন অন্য রূপ। মহালয়ার দিন থেকে শুরু হয়েছে এই চিত্র। লরি করে ধ্বণি দিতে দিতে প্রতিমা নিয়ে যাচ্ছেন পুজোর উদ্যোক্তারা। টালা থেকে টালিগঞ্জ— হরেক অঞ্চলের ক্লাবের ছেলেরা আসছেন। শিল্পীদেরও ভয়ানক চাপ। শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা।
গত বছর ৩০টি মাটির এবং দুটি ফাইবার গ্লাসের প্রতিমা তৈরি করেছিলেন কুমোরটুলির অন্যতম বড় শিল্পী মিন্টু পাল। মঙ্গলবার এই প্রতিবেদককে জানালেন, “এবার ৪০টি মাটির এবং ১৫ টি ফাইবার গ্লাসের প্রতিমা তৈরি করেছি। ফাইবার গ্লাসের সবগুলো চলে গিয়েছে মহালয়ার দিন। আর মাটির ঠাকুর গিয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ।” সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার, সল্ট লেক এফডি ব্লক, বেনিয়াটোলার এক টন অষ্টধাতুর মূর্তির মত বেশ কিছু নজরকাড়া প্রতিমার এবারের শিল্পী মিন্টু পাল। বললেন, “২৮ জন সহকারি নিয়ে ক’দিন ধরে ক্রমাগত কাজ করে চলেছি।“
প্রায় একই রকম ব্যস্ত শম্ভুচরণ পাল অ্যান্ড সন্সের দুই প্রধান কারিগর, দুই ভাই অপূর্ব ও পার্থপ্রতিম। কুমোরটুলি প্রগতিশীল মৃৎশিল্পী ও সাজশিল্পী সমিতির সম্পাদক অপূর্ব এই প্রতিবেদককে বললেন, “অতিমারির দাপটে গত দুবছর বেশ চাপে ছিলাম। গতবার ২০টি ঠাকুর করেছি আমরা। এবার ৩০টি। প্রায় ৬০ শতাংশ প্রতিমা চলে গিয়েছে। তৃতীয়ার মধ্যে বাকিগুলো চলে যাবে। বাবা যতীন্দ্রনাথ পাল (৮১) গতবারও ছিলেন মূল কারিগর। এবার উনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমাদের দুভাইয়ের ওপর বড় দায়িত্ব এসে পড়ে।“
পাঁচ পুরুষের প্রতিমাশিল্পী পরিবারের শরিক কুমোরটুলির গৌতম এমনিতে বছরভর পশুচিকিৎসকের সহায়ক হিসবে কাজ করেন। পুজোর এক মাস ব্যস্ত হয়ে থাকেন ঠাকুর তৈরির কাজে। গতবার সহায়কদের নিয়ে ১৭ টি দুর্গাঠাকুর তৈরি করেছিলন। এবার ২৪টি। সোমবার পর্যন্ত ৭টি গন্তব্যে নিয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার যাবে আরও দুটি। এই প্রতিবেদককে বললেন, “বাবার বয়স হয়েছে। তাই দেবীর চোখ আঁকা পুরোটাই আমার করতে হচ্ছে। তাই চাপ বেড়েছে। আগামী তিন দিন ব্যস্ত থাকতে হবে। এর পর ক’দিন সামান্য বিশ্রামের পর ফের লেগে পড়তে হবে অন্য প্রতিমা তৈরিতে।“
২০০২ সালে দুই কন্যাকে রেখে হঠাৎ স্বামীর মৃত্যুর পর প্রতিমাশিল্পে জড়িয়ে পড়েন কুমোরটুলির কাকলী পাল। কাকলীর বাবা কৃষ্ণচন্দ্র পালও প্রতিমাশিল্পী। তবে কুমোরটুলির নয়, কৃষ্ণনগরের অদূরে ধুবুলিয়ার কাছে হরিণডাঙায় থাকেন। কাকলী এই প্রতিবেদককে বললেন, “বয়স হওয়ায় এবার আর উনি ঠাকুর তৈরি করতে পারেননি। ওনার কাজ ছোটবেলা থেকেই দেখেছি। তাই ঠাকুর তৈরির অআকখ অনেকটাই জানতাম। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট মেয়ে কলেজে পড়ে। এবার গোটা পঁচিশ ঠাকুর করেছি। সিঁথির মোড়, বেহালা, কাঁকুরগাছি, নিউ আলিপুরের বড় ঠাকুর আছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ৮টি ঠাকুর চলে গিয়েছে। এখন শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা।“ পুজোর আর তো ক’টা দিন বাকি! বাকি ঠাকুরগুলো চলে গেলে বোধহয় একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন? কাকলীর জবাব, “না, না। এর পর লক্ষী, জগদ্ধাত্রী, কালী— এ সব প্রতিমা আছে না! কার্তিক মাসটাও ব্যস্ততায় কাটবে। এর পর একটু বিশ্রাম নিয়ে লেগে যেতে হবে সরস্বতী ঠাকুর তৈরিতে।“