কলকাতা, ২৭ আগস্ট : আর মাসখানেকের মধ্যেই শেষ করে ফেলতে হবে দুর্গামায়ের কাজ। আকাশ ঝলমল দেখলে তাই যেমন মনখুশ, তেমনই আতঙ্ক জাগে বৃষ্টির পূর্বাভাসে। কাঁচামালের সমস্যা ভোগাচ্ছে। তার মধ্যেও কুমারটুলির শিল্পীরা এই মুহূর্তে মহাব্যস্ত। সাত পুরুষ ধরে কুমারটুলিতে আছেন অপূর্ব পাল। দাদু ছিলেন কুমোর। তার পর থেকেই পরিবারে একটু একটু করে জাঁকিয়ে বসে প্রতিমাশিল্প। অপূর্ব ১৯৯০-এর স্নাতক, এখন পুরোদস্তুর শিল্পী। করোনাকালে অন্তে এবার বাজার ভাল। এই প্রতিবেদককে বললেন, “২০২০ আর ’২১-এ যথাক্রমে ১২টি ও ২০ টি ঠাকুর করেছিলাম। এবার প্রায় ৩৪টা করছি। কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি কপালে ভাঁজ ফেলেছে শিল্পীদের। প্রতিমা তৈরির সব জিনিসের দামই বেড়েছে। পাঁচ বাণ্ডিল অর্থাৎ এক ‘তরপা’ খড় গতবারও মিলেছিল ১৫০ টাকায়। এবার হয়েছে ৩৫০ টাকা। বিশেষ ধরণের বাঁশ নদীপথে আসত মুর্শিদাবাদ থেকে। এবার এসেছে খুব কম। পেরেকের কিলো গতবছর ছিল ৭৫ টাকা। বেড়ে হয়েছে ৯০ টাকা। গৌরীপুরের দড়ি ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১১৫ টাকা। সমস্যায় ফেলেছে প্রতিমা তৈরির বিশেষ মাটি। আগে উলুবেড়িয়ায় গঙ্গার নিচ থেকে এঁটেল মাটি আসত। নৌকোপিছু ১৫ হাজার টাকা। প্রতি মাসে প্রায় ৮০ নৌকো আসত। পুলিশ-প্রশাসনের কড়াকড়িতে এখন ৫ নৌকোও আসছে না। এখন দক্ষিণ ২৪ পরগনার খেতের মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি করতে হচ্ছে। অসুবিধা হচ্ছে এতে। কয়েক বছর আগে দেশপ্রিয় পার্কে ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুর্গা’ তৈরি করে হইচই বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের অন্যতম সেরা মৃৎশিল্পী মিন্টু পাল। এই প্রতিবেদককে জানালেন, “এবার ৩৫টি প্রতিমা তৈরির বরাত পেয়েছেন। এর মধ্যে ১৪টা বাইরের। গত বছর প্রতিমার গড় উচ্চতা ছিল ১০’-১১’ এর মত। এবার অতিমারী-অন্তে উচ্চতা হচ্ছে ১৮’-১৯’ এর মত। ইউনিসেফ-এর স্বীকৃতি পাওয়ায় বাংলার পুজোয় এবার অনেক বেশি মাত্রা এসেছে।“ ৩১ আগস্ট গণেশপুজো। কুমোরটুলিতে এবার অনেক শিল্পীই মজেছিলেন সিদ্ধিদাতার মূর্তি তৈরিতে। তাঁদের সেই কাজ প্রায় শেষ। এখন ঘড়ির কাঁটা ধরে কেবলই দেবী দুর্গা, তাঁর সন্তানসন্ততী, তাদের বাহন আর মহিষাসুরকে ফুটিয়ে তোলার কাজ। সারা বছরের এই একটা মাস বুঝি বাকি ১১ মাসের থেকে ভিন্ন। ব্যস্ততা তাই তুঙ্গে।