বাঁকুড়া, ২২ সেপ্টেম্বর: চুয়াড় বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক রাজা দুর্জন সিংহদেবের পরিবারের কুলদেবী মা মহামায়া। রাইপুরে প্রাচীন রাজপরিবারের গড় থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে চাঁদুডাঙা গ্রামে এই দেবীর মন্দির আলম সায়েরের তীরে অবস্থিত।
রাইপুরের নাম নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। লোকসংস্কৃতি গবেষক তথা বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের অধ্যাপক অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “রাইপুরের প্রাচীন নাম ছিল ধরমপুর। পরে রাজাদের কুলদেবী ‘রাই’ এর নাম অনুসারে ওই জনপদের নাম রাইপুর হয়েছে। আকবরনামায় এর নাম ‘রায়পুর’ রয়েছে। তখন রায়পুর সরকার জল্লেশ্বরের (অধুনা ওড়িশা) অন্তর্গত ছিল।”
ওই রাজপরিবার রাইপুর বাজার থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে নতুন গড় তৈরি করে। এর পরে মধ্যসত্ত্ব লোপ ও ব্রিটিশবিরোধী কার্যকলাপের ফলে সে পরিবার সঙ্কটে পড়ে। বংশধররা কার্যত হতদরিদ্র পরিবার হয়ে জীবন যাপন করতে থাকেন। তাই একটি কমিটি তৈরি করা হয়। এই পুজো হয়ে ওঠে সর্বজনীন।
এবিষয়ে রাজপরিবারের ১৫তম বংশের প্রধান গোপীনাথ সিংহদেব জানায়, মহাষষ্ঠীর দিনে যে বছর যে যানে মা দুর্গার আগমন ও গমন হয়, অনুরূপ যানে রাজলক্ষ্মীকে নতুন গড় থেকে নিয়ে শোভাযাত্রা সহকারে মা মহামায়ার মন্দিরে যাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা রাজ অস্ত্র হাতে নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে মন্দিরে আসে। শুরু হয় দেবীর বোধন।
মন্দিরে প্রস্তর মূর্তি কোকামুখা। অন্যান্য সময় মা মহামায়া রূপে নিত্যপুজিতা হলেও কৃষ্ণা নবমীর দিন থেকে দুর্গা রূপে পূজিতা হন। মহাদশমীতে বিসর্জনের পর অনুরূপ শোভাযাত্রা সহকারে কুলদেবীকে রাজপরিবারে পৌঁছে দেওয়া হয়। আগমন ও বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখতে রাস্তার দু'ধারে ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে উলু ও শাঁখের ধ্বনিতে আকাশবাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।
গোপীনাথ সিংহ দেবের কথায়, এই পুজো এবছর ৩২৭ বছরে পড়ল। মহামায়া বিষয়ে এলাকায় একটি সুন্দর লোককাহিনী প্রচলিত। এই মুহূর্তে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মন্দিরের পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে বলে মন্দির কমিটির অন্যতম সদস্য রঞ্জিতকুমার মিশ্র জানান।