কলকাতা : রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে তদন্তের ঝাঁঝ আরও বাড়াচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) । বাকিবুর, জ্যোতিপ্রিয়র আরও সম্পত্তির খোঁজ পেতে জোরকদমে চলছে তদন্ত। ইডি সূত্রে খবর, বাকিবুর রহমানের কাছ থেকে ৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। জেরায় ঋণ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন জ্যোতিপ্রিয়। এবিষয়ে বিস্তারিত জানতে জেলে গিয়ে জ্যোতিপ্রিয়কে জেরা করবে ইডি ।
রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে বাকিবুরকে গ্রেফতারের পর জ্যোতিপ্রিয় সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি বাকিবুরকে চেনেনই না। কিন্তু, এখন একেবারে ঋণের কথা সামনে আসায় তা নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। জ্যোতিপ্রিয় নিজেই জানিয়েছেন ঋণ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তা নিজের নামে নেননি মন্ত্রী। ইডি সূত্রে খবর ঋণ নেওয়া হয়েছিল তাঁর কন্যা ও স্ত্রীর নামে। গোটা প্রক্রিয়া চলে ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে। কিন্তু, কেন তিনি কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে লোন না নিয়ে এক চালকল মালিকের থেকে লোন নিতে গেলেন সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সূত্রের খবর, এই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই জ্য়োতিপ্রিয়কে করেছেন ইডির তদন্তকারীরা। তিনি যেটাকে লোন হিসাবে দেখাচ্ছেন তাহলে এটাই কী দুর্নীতির টাকা? দুর্নীতির যে টাকা বাকিবুর প্রভাবশালীদের দিয়েছেন বলে শোনা গিয়েছে সেই টাকাই কি এই টাকা? ঘুরছে একগুচ্ছ প্রশ্ন।
অন্যদিকে আজ, শনিবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে ইডির দাবি, বাকিবুর ও জ্যোতিপ্রিয় পরস্পরকে চিনতেন। এমনকী তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতাও ছিল। ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ হিসেবে এদিন আদালতে ইডি বিনা সুদে এই বিপুল ঋণের কথা জানায়। তারপর বাকিবুরকে আগামী ২২ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। জেলে গিয়ে তাঁকে জেরার জন্য আদালতের অনুমতিও পেয়েছে ইডি। নিজেদের দাবির সপক্ষে আদালতে একাধিক নথিও পেশ করে ইডি। আর ইডির পক্ষ থেকে বিচারপতিকে বলা হয়, ‘সেই ঘনিষ্ঠতা না থাকলে কোনও কাগজ ছাড়াই কেউ অচেনা কাউকে ৯ কোটি টাকা ঋণ দেবে?’
ইডি আদালতে আজ জানিয়েছে, রেশনের চালের টাকা তছরুপ করেছেন বাকিবুর। তার জন্য ভুয়ো কৃষকদের নামে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। বেশ কয়েকজনকে কৃষক সাজিয়ে দেখিয়ে ওই অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন বাকিবুর। এই অ্যাকাউন্টগুলিতেই যেত ধানের সহায়ক মূল্য। এই সব বহু ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলেছে। রেশনের কালো টাকা সাদা করতে ভুয়ো কৃষক সংগঠন ‘ফার্মারস ফোরাম’ নামে গড়ে তোলা হয়। ওই সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন রাইস মিল মালিক বাকিবুর রহমান। আগামী সোমবার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ইডি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হবে। তার আগে এই ৯ কোটির রহস্য বের করতে চাইছেন তদন্তকারীরা।