কলকাতা, ৬ জুন: আমজনতার কাছে পৌঁছোতে লোকসভা ভোটের ঢের আগে গোটা দেশে পরিকল্পিতভাবে জমি তৈরি করতে নেমেছে বিজেপি। এর জন্য শুরু হয়েছে ‘মহাসম্পর্ক অভিযান’। চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। বিভিন্ন রাজ্যের বাছাই করা ১৬০ জন নেতাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
পশ্চিমবঙ্গে এই অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিজেপি-র জাতীয় কার্যনির্বাহী সমিতির অন্যতম সদস্য, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রথম বিজেপি স্পিকার ও ওই রাজ্যের প্রাক্তন উপ মুখ্যমন্ত্রী কবীন্দর গুপ্ত এবং বিহারের রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি মঙ্গল পাণ্ডে। আপাতত এই দু’জনের নেতৃত্বে সফর চলছে হুগলি, বর্ধমান-দুর্গাপুর, বিষ্ণুপুর (তফ) ও বনগাঁ (তফ) কেন্দ্রে।
কী হচ্ছে এই ‘মহাসম্পর্ক অভিযান’-এ? কবীন্দর গুপ্ত এই প্রতিবেদককে জানান, “বিভিন্নভাবে আমরা জনগনের কাছে পৌঁছোতে চাইছি। যেমন ১) নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে জনসভা, ২) দলের কিষাণ, মহিলা, যুব, তফশিলি জাতি ও উপজাতি, ওবিসি ও সংখ্যালঘু মোর্চার আঞ্চলিক নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক, ৩) গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, দলের পুরনো সদস্য, সম্পাদক, বরিষ্ঠ সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, শিল্পী, বিজ্ঞানী, ক্রীড়াবিদ, ব্লগার, শ্রমিক সংগঠনের নেতা, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগী প্রভৃতিদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আলোচনা, ৪) ২১ জুন বিভিন্ন অঞ্চলে যোগদিবস পালন করানো, ৫) ২৩ জুন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির আত্মবলিদান দিবস উদযাপন, প্রভৃতি। এ ছাড়াও ২৫ জুন, মাসের শেষ রবিবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠান সর্বত্র শোনানোর চেষ্টা হবে।
এই সঙ্গে বিভিন্ন ‘বিকাশতীর্থ’-র উপযোগিতা স্থানীয় জনগনকে বোঝানোর চেষ্টা হবে। কোথা, কাদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে, একটি তালিকায় তা বিশদ লেখা হচ্ছে। যেমন সোমবার কবীন্দরবাবু সপারিষদ ঘুরে এসেছেন ভারত-বাংলাদেশ স্থলবন্দরে। ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কেন্দ্রের এই প্রকল্পে কীভাবে, কতটা সুবিধা পাওয়া যাবে আঞ্চলিক পর্যায়ে সেটির ওপর আলোকপাতের চেষ্টা হয়েছে। মঙ্গলবার যাচ্ছেন বর্ধমানে। সেখানে একাধিক বৈঠক ও সমাবেশের মাঝে যাচ্ছেন সর্বমঙ্গলা মন্দিরে। বুধ ও বৃহস্পতিবারও দিনভর অনুষ্ঠান আছে তাঁর।
বিজেপি-র ভিন রাজ্যের যেসব নেতা-নেত্রী পশ্চিমবঙ্গে আছেন, তাঁদের অধ্যতম রাঁচির মেয়র তথা এ রাজ্যে দলের সহ পর্যবেক্ষক ডঃ আশা লাকড়া। সোমবার তিনি শ্রীরামপুরে কিছু সমাবেশে অংশ নেন। মঙ্গলবার তাঁর কাঁথিতে তিনটি এবং খেজুরি ও বাজকুলে একটি করে অনুষ্ঠান নির্ধারিত আছে। বিহারের প্রাক্তন উপ মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যসভার সাংসদ সুশীল কুমার মোদী সোমবার যান উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশালিটি ব্লকে। এটি ওখানকার উল্লেখযোগ্য ‘বিকাশতীর্থ’, অর্থাৎ কেন্দ্রীয় প্রকল্প। মঙ্গলবার তাঁর কোচবিহারে চারটি অনুষ্ঠান নির্ধারিত আছে।
উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন উপ মুখ্যমন্ত্রী তথা এমএলসি দিনেশ কুমার শর্মা সোমবার যান তারাপীঠ ও নলহাটিতে। মঙ্গলবার তাঁর দক্ষিণ ২৪ পরগণার নামখানায় দুটি, গঙ্গাসাগর ও রুদ্রনগরে একটি করে অনুষ্ঠান নির্ধারিত আছে। কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত প্রতিমন্ত্রী কপিল মোরেশ্বর পাতিলের মঙ্গলবার যাওয়ার কথা বীরভূমের চারটি নির্দিষ্ট স্থানে।
বিজেপি-র এ রাজ্যের সহ পর্যবেক্ষক অমিত মালব্যর মঙ্গলবার যাওয়ার কথা বৈষ্ণবনগর, ‘বিকাশতীর্থ’ ফারাক্কার এনটিপিসি-তে, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও প্রয়াগরাজের বিধায়ক সিদ্ধার্থ নাথের মঙ্গলবার দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পুজো দিয়ে দুটি ‘বিকাশতীর্থ’ দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশন ও শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশনে যাওয়ার কথা। এ ছাড়াও দুটি নির্ধারিত জনসংযোগ অভিযান ও রাজ্য নেত্রী মীনাদেবী পুরোহিতের বাড়ি যাবেন।
স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে এই সম্পর্ক অভিযানে অংশ নিচ্ছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্য সভাপতি ডঃ সুকান্ত মজুমদার, অন্যতম প্রাক্তন জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা, মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী ফাল্গুনি পাত্র, এস টি মোর্চার জাতীয় সভাপতি সমীর ওঁরাও প্রমুখ। সোমবার দিলীপবাবু এবং ফাল্গুনি যান বারাসাত, মধ্যমগ্রাম, বামুনগাছিতে। মঙ্গলবার ফাল্গুনি যান কৃষ্ণনগরে। রাহুলবাবু যান বাগুইআটি-জ্যাঙড়ায়। সমীর ওঁরাও সোমবার যান ঝাড়গ্রাম-শালবনীতে। মঙ্গলবার তাঁর বাঁকুড়ায় তিনটি অনুষ্ঠান নির্ধারিত আছে। বিরোধীদলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল প্রমুখরাও যাচ্ছেন বিভিন্ন সভায়।