কলকাতা, ১৫ মে : ভারতের নিজস্বতাই দেশকে বিশ্ব-মানচিত্রে কৌলিন্যের আসন দিচ্ছে। উন্নয়নের রাশ ধরে রাখতে রামায়ণ-মহাভারত থেকে আমাদের পাঠ নিতে হবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী ডঃ সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর। হনুমানজীকে তিনি ‘সুপার ডিপ্লোম্যাট’ বলেও অভিহিত করেন। অনুষ্ঠানে ডঃ জয়শঙ্করের লেখা বাংলা সংস্করণ ‘বিশ্ববন্ধু ভারত’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন বইটির অনুবাদক কৌশিক দাশগুপ্ত। সেখানে ‘রাজস্থান বেঙ্গল মৈত্রী পরিষদ-এর সভাপতি শিশির বাজোরিয়া সংক্ষিপ্ত ভাষণে বিদেশমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, “২০২০-তে ‘দি ইন্ডিয়া ওয়ে, স্ট্রাটেজিস ফর অ্যান আনসার্টেন ওয়ার্ল্ড’-এর ভিত্তি ছিল দেশের একটি পুরাণ, ’২৪-এর ‘হোয়াই ভারত ম্যাটার্স’-ও পুরাণের বিশদ মাথায় রেখে লেখা। এর নেপথ্যের কারণটা কী? এর উত্তরেই রামায়ণ-মহাভারতের সর্বকালীন উপযোগিতা, ওই দুই পুরাণের বিভিন্ন চরিত্রের অনন্যতার নানা কথা বলেন ডঃ জয়শঙ্কর।
তিনি বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতায় আমাররমনে পড়ে বিশ্বামিত্র আর বশিষ্ট— দুই মুনির দ্বৈরথ। আমরা অনেক সময়ে বক্তব্যের সমর্থনে বিদেশি তত্বের উদাহরণ দিই। কিন্তু নজীর আমাদের নিজেদের পুরাণেই অনেক রয়েছে”। এই প্রসঙ্গে ডঃ জয়শঙ্করের ভাষণে শ্রীকৃষ্ণ থেকে ছুঁয়ে যায় প্রভু শ্রীরামের কথাও। বলেন, হনুমানজীর সুপার ডিপ্লোম্যাট হয়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছে তার ‘পারসিভারেন্স’ এবং ‘কমিটমেন্ট’। কেন, তার ব্যখ্যাও দেন বিদেশমন্ত্রী। বলেন, বিশ্বে ‘বিকশিত ভারত’-এর চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে আমাদের নিজস্ব জীবনশৈলীতে, ভারতীয়ত্বে। গত ৫ বছরে যে প্রশংসা এবং গ্রহণযোগ্যতা ভারত পেয়েছে, সেটা দেশকে আরও এগিয়ে যাওয়ার চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে।
কোভিড নিয়ন্ত্রণ থেকে জ্বালানির দাম, যুদ্ধদীর্ণ দূরের দেশে আটকদের উদ্ধারকার্য থেকে শুরু করে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে কীভাবে বিদেশনীতি প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় হচ্ছে— সেসবের নির্দিষ্ট উদাহরণ দেন জয়শঙ্কর। তাঁর ৪৮ মিনিটের দীর্ঘ, ঝকঝকে ভাষণ ছুঁয়ে যায় ভারত গত কয়েক বছরে কেন, কীভাবে, কতটা বিশ্বের সম্ভ্রম আদায় করেছে।
বিদেশমন্ত্রী বলেন, “করোনাকালে প্রতিবেশী সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের সহায়তা না পেয়ে ঘোর অনিশ্চয়তায় পড়া ছোট ছোট কিছু বিপন্ন রাষ্ট্রর পাশে আন্তরিকভাবে দাঁড়িয়েছিল ভারত। তাঁরাও দু’হাত বাড়িয়ে আপন করে নিয়েছে ভারতকে।” কোভিডে বিভিন্ন দুর্বল দেশকে কীভাবে ভারত কতটা সহায়তা করেছে, তার বিশদ জানাতে গিয়ে বলেন, “জ্যামাইকার বিদেশমন্ত্রী পাঁচজনের সামনে বলেছেন, ‘আই হ্যাভ ইন্ডিয়া ইনসাইড মি’। এটাই আমাদের প্রকৃত সার্থকতা। ভারত প্রকৃতই কেবল নিজের উন্নতিতে আটকে থাকে না। বিশ্বাস করে সর্বজনীন উন্নয়নে। তার সুফলও পেয়েছে এবং পাচ্ছে নানা ভাবে। কূটনীতি শুরু করতে হবে নিজের ঘর থেকে।”
তাঁর বই ‘হোয়াই ভারত ম্যাটারস’-এর নামকরণের যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনায় গত ১০ বছরে ভারতের ২৫ কোটি লোককে দারিদ্র্যসীমার নিচ থেকে তুলে আনা, ‘জি টোয়ান্টি’-তে সার্থক ভূমিকা নেওয়া, ’২০-র মে-তে নরেন্দ্র মোদীর বিচক্ষণতায় নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনকে সমুচিত জবাব, সন্ত্রাসবাদ দমন— প্রভৃতির নানা সাফল্যের উল্লেখ ও আলোচনা করেন ডঃ জয়শঙ্কর। বলেন, “করোনার ছোবলে আক্রান্ত বিশ্ব-অর্থনীতি এখনও ছুটতে পারছে না। তার মধ্যেই আমাদের দেশে প্রবৃদ্ধির ৭ শতাংশ হার। এই পরিস্থিতি রাতারাতি একদিনে হয়নি। একসময় ভারত বলতে বিশ্ববাসী বুঝত গরিব মানুষের দেশ। এখন তা আমূল বদলে গিয়েছে।
বিদেশমন্ত্রী বলেন, “আগে ভারত ছিল ব্যাক অফিস। এখন রেশন, পানীয় জল, জ্বালানি, মাথার ওপর ছাদ যেমন গরিব মানুষ পাচ্ছে, তেমনই ‘ট্র্যাকিং’-এর মত নানা সুযোগের মাধ্যমে ডিজিটাইজেশন বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করছে। বিভিন্ন রাষ্ট্র ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ক্রমেই বেশি মাত্রায় আকৃষ্ট হচ্ছে ভারতে।” ডঃ জয়শঙ্করের কথায়, “দি ওয়ার্ল্ড ইজ ওয়াচিং ইন্ডিয়া। ভারত ম্যাটার্স, বিকজ দি ওয়ার্ল্ড থিঙ্ক সো। টুডে ভারত ম্যাটার্স মোর অ্যান্ড মোর। রাইজ ডাজ নট হ্যাপেন বাই ইটসেল্ফ।”