নাগপুর, ২ জুন : ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের রাজ্যাভিষেকের ৩৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে, ছত্রপতির প্রতিষ্ঠিত স্বরাজই হল সঙ্ঘের হিন্দু রাষ্ট্র। এই মন্তব্য করলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-র সরসঙ্ঘচালক ডঃ মোহন ভাগবত।
বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্রের নাগপুরের রেশমবাগে আয়োজিত সঙ্ঘের তৃতীয় বর্ষের সঙ্ঘ শিক্ষা বর্গের সমাপনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে সরসঙ্ঘচালক বলেছেন, ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন এবং সেখান থেকে হিন্দু সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শিবাজী মহারাজ দেশের প্রাচীন মূল্যবোধকে জাগ্রত করেছিলেন। গোহত্যা বন্ধ করিয়েছিলেন। মাতৃভাষাযর ব্যবহার শুরু হয়। স্বরাজ্যে শক্তিশালী নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। যারা দেশের প্রতি অনুগত ছিলেন তাঁদের রক্ষা করেছেন।
এছাড়াও, ঔরঙ্গজেব কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করার পর, শিবাজি ঔরঙ্গজেবকে একটি চিঠি পাঠান। সেই চিঠিতে শিবাজি জানান, ধর্মের ভিত্তিতে রাজা প্রজাদের মধ্যে বৈষম্য করবেন না। সবার সঙ্গে সমান আচরণ করা উচিত। ছত্রপতি ঔরঙ্গজেবকে সতর্ক করেছিলেন, ধর্মীয় কারণে প্রজাদের বৈষম্য করা হলে তিনি তরোয়াল নিয়ে উত্তর ভারতে পৌঁছবেন।
সরসঙ্ঘচালক ডঃ মোহন ভাগবত বলেছেন, নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি এবং প্রাচীন মূল্যবোধ রক্ষা করার সময়, যে সমস্ত মানুষ দেশকে নিজস্ব মাতৃভূমি হিসাবে বিবেচনা করেছিল তাঁদের স্বরাজে স্থান এবং সুরক্ষা রয়েছে। এই উপলক্ষে নেতা ও রাজনৈতিক দলগুলির বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ডঃ ভাগবত বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ক্ষমতার জন্য প্রতিযোগিতা দোষের কিছু নেই৷ প্রতিযোগিতা মানে সংগ্রাম, কিন্তু আমরা কি করি, কি বলি, কোথায় এবং কিভাবে বলি সে সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। রাজনৈতিক পার্থক্য এবং ক্ষমতার জন্য প্রতিযোগিতারও সীমা প্রয়োজন।
সরসঙ্ঘচালক বলেন, রাজনীতিবিদদের সতর্ক থাকতে হবে। তাঁদের কর্মকাণ্ড যাতে দেশের বদনাম না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সরসঙ্ঘচালক আহ্বান জানান, নিজের ছোট ধর্মীয় পরিচয় বজায় রাখার জন্য অহেতুক জেদ করা ঠিক নয়। যে সমস্ত ধর্মের অনুসারীরা বিদেশ থেকে ভারতে এসেছেন তাঁদের এই সত্যটি মেনে নেওয়া উচিত যে তাঁদের পূর্বপুরুষরা এখান থেকে এসেছেন। বাইরে থেকে যারা এসেছিল তাঁরা চলে গিয়েছে। এখন যা আছে তা চিরকাল আমাদের।
সরসঙ্ঘচালক বলেন, এই সত্য মেনে নিয়ে পারস্পরিক লড়াই ছেড়ে দিতে হবে। ভাগবত বলেন, ১৯২৫ সাল থেকে সঙ্ঘ ক্রমাগত দেশ ও সমাজের স্বার্থে কাজ করে চলেছে। সঙ্ঘ কারও কাছে কিছু চায় না। কোনও কাজের কৃতিত্বও নিতে চায় না সঙ্ঘ। সমাজ ও স্বেচ্ছাসেবকরা একসঙ্গে ভালো কাজ করছে। এই লক্ষ্যে দেশের সমস্ত মানুষ একত্র হলেই আমরা উন্নতি করব। ভাগবতের মতে, সবার প্রচেষ্টায় দেশ এগিয়ে যাবে।এ ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই।
এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশ্ববীর কাদসিদ্ধেশ্বর স্বামী বলেন, সঙ্ঘের কাজ একটি জাতীয় কাজ এবং দেশ ও সমাজের উন্নতির জন্য যা যা প্রয়োজন তা সঙ্ঘ ও স্বয়ংসেবকরা করে চলেছেন। এই উপলক্ষ্যে তিনি দেশের ঋষি-সাধুদেরকে সঙ্ঘের কাজে অবদান রাখার এবং দেশের চূড়ান্ত গৌরব অর্জনে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।