দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: চাঞ্চল্য ছড়াল উত্তর মালদহের চাঁচলে। কেন্দ্রবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি পোড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রাক্তন ছাত্রনেতা এ বি সোয়েল ওরফে নাসিমুল হককে। ঘটনার মাত্র একদিন আগেই তাঁকে টিএমসিপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এবার সেই ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করল পুলিশ। গোটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে চরম বিতর্ক ও চাপানউতোর।
২ সেপ্টেম্বর চাঁচল কলেজের সামনে কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করে টিএমসিপি। অভিযোগ, সেই কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র ছবির সঙ্গে সঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবিও পোড়ানো হয়। যদিও প্রাথমিকভাবে রবীন্দ্রনাথের ছবি পোড়ানোর বিষয়টি সামনে আসেনি। পরে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে যখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এক্স হ্যান্ডেলে -এ সেই ঘটনার ভিডিও পোস্ট করেন। ভিডিওটি মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়ে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে প্রতিবাদ মিছিল করেন।
ঘটনায় অভিযুক্ত এ বি সোয়েল ছিলেন চাঁচল কলেজের টিএমসিপি ইউনিট সভাপতি। তিনি কলেজেরই ছাত্র, বর্তমানে ফাইনাল ইয়ার বা ষষ্ঠ সেমিস্টারের পাস কোর্সে পড়াশোনা করছেন। রবীন্দ্রনাথের ছবি পোড়ানোর অভিযোগ ওঠার পর সোয়েল-সহ গোটা ইউনিট কমিটির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয় শাসক দলের ছাত্র সংগঠন। রাজ্য টিএমসিপি সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য সোমবার তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার নির্দেশ দেন। শুধু তাই নয়, চাঁচল কলেজের টিএমসিপি ইউনিট কমিটিও সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দেওয়া হয়। ওই কমিটিতে ৩০ জন সদস্য ছিলেন।
সোমবার রাতে মালদহের চাঁচলের নয়াটোলার বাড়ি থেকে সোয়েলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। স্থানীয় এক বাসিন্দার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ তদন্তে নামে। চাঁচল থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগে জানানো হয়, রবীন্দ্রনাথের ছবি পোড়ানোর মধ্য দিয়ে জাতির মনীষীকে চরম অসম্মান করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোয়েলের বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে এবং ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা অন্যদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখে তদন্ত এগোচ্ছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপির দাবি, তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনই আজ জাতির গর্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মর্যাদাকে পদদলিত করছে। বিরোধীদের অভিযোগ, শুধুমাত্র মোদি-বিরোধিতার নামে সব সীমা পেরিয়ে গিয়েছে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ছাত্ররা। অপরদিকে, তৃণমূল নেতৃত্ব এ ঘটনায় দায় ঝেড়ে ফেলে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। দলীয় ছাত্র সংগঠনের তরফে প্রকাশ্যে জানানো হয়েছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অপমান কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। এ বি সোয়েল যে কাজ করেছেন, তা ব্যক্তিগত এবং দলের নীতির পরিপন্থী। গ্রেপ্তার হওয়া সোয়েলকে মঙ্গলবার তোলা হবে মালদহের চাঁচল মহকুমা আদালতে। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্ত দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে এবং প্রমাণ সাপেক্ষে বাকি অভিযুক্তদেরও গ্রেপ্তার করা হবে। চাঁচল কলেজ প্রশাসনও ঘটনাটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
অশিক্ষা, বর্বরতা ও ঔদ্ধত্য কোন চরম সীমায় পৌঁছালে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটতে পারে!
— Dr. Sukanta Majumdar (@DrSukantaBJP) September 7, 2025
মালদহের চাঁচল কলেজ প্রাঙ্গণে এক টিএমসিপি নেতা প্রকাশ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছে এ দৃশ্য শুধু গোটা বাঙালি সমাজকে মর্মাহতই করে না, বরং মাথা নত করে… pic.twitter.com/2Xy2JsJgWn